এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে মন্দাভাব। তার ওপর মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে দিশেহারা চলচ্চিত্র অঙ্গন। শুটিং বন্ধ থাকায় দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা চলচ্চিত্রকর্মীদের অন্নে পড়েছে টান। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পেশার মানুষেরও একই অবস্থা। এ সময় কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পিছিয়ে নেই চিত্রনায়িকা নিপুণও।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি নিজ নিজ উদ্যোগে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন অসহায় কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়াতে। ব্যক্তিগতভাবে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও অনন্ত জলিলও এর আগে সহযোগিতা করেছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি যেহেতু নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে, তাই সমিতির মাধ্যমে অসহায় চলচ্চিত্রকর্মীদের পাশে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী নিপুণ। সমিতির প্রতিনিধিদের হাতে নিপুণ তুলে দিয়েছেন অর্থসাহায্য।
এ প্রসঙ্গে সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে সমিতির সদস্যদের খবর রাখা, সমস্যায় পাশে দাঁড়ানো আমার দায়িত্ব। আর চলচ্চিত্রের শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র পরিবারের খবর রাখা, সমস্যায় সবার পাশে দাঁড়ানো দায়িত্ব। আজ আমরা দুটি সংগঠনের হাতে চেক তুলে দিয়েছি। আগামীকাল কিছু সংগঠনকে চেক দেব। ইনশা আল্লাহ, আগামী রোববারের মধ্যে আমাদের সমস্যায় থাকা সংগঠনের হাতে চেক তুলে দিতে পারব। আর সবাইকে বলব, আপনারা কাছের মানুষটির পাশে দাঁড়ান। তবেই করোনার এই সময়টাতে সম্মান নিয়ে সবাই খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারবে।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পর্দায় আমরা হিরো, আমরা বড় বড় তারকা শিল্পী, তাদের পাশে দাঁড়াবে শিল্পী সমিতি। নায়িকা নিপুণকে অনেক ধন্যবাদ সহযোগিতা করার জন্য। তাঁর সহযোগিতা নিয়েই আমরা চলচ্চিত্রের কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেব। যেন সমস্যায় থাকা সঠিক কলাকুশলীর হাতে তাঁরা টাকাটা পৌঁছে দিতে পারেন। শিল্পী ও কলাকুশলী মিলেই আমাদের চলচ্চিত্র। এটা আমাদেরই পরিবার। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা এই কাজটি করছি।’
চিত্রনায়িকা নিপুণ বলেন, ‘আমার মতো হাজার-কোটি নিপুণ আছে এই বাংলাদেশে। তবে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নিপুণ একজনই। যেখানেই যাই, সবাই আমাকে সম্মান করে। কারণ আমি অভিনেত্রী নিপুণ। আমার এই নিপুণ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এই কলাকুশলীদের। যাঁরা আমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়েছেন। গায়ে যেন রোদ না লাগে, তাই ছাতা ধরেছেন। গল্পের চরিত্রের ভেতর প্রবেশ করতে সহযোগিতা করেছেন। ক্যমেরার পেছনে থেকে আমাকে বড় পর্দায় তুলে ধরেছেন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ছোট করতে চাই না। এখন যেটা দিচ্ছি, সেটা কোনো দান নয়, এটা পরিবারের প্রতি দায়িত্ব। সবাই ভালো থাকবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কল্যাণে ঘরে বসেই তিন বেলা খাবার পাচ্ছেন অসহায় শিল্পীরা। সমিতি ঘোষণা দিয়েছে ‘যত দিন করোনা, তত দিন ঘরে বসেই খাবার পাবে শিল্পীরা।’ প্রয়াত শিল্পীদের পরিবারেও খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে।
এর আগে জরুরি চিকিৎসা দিতে মেডিকেল টিম গঠন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। চলচ্চিত্রের সব শিল্পী ফোন করেই নিতে পারছেন এই সেবা। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে সমিতির উদ্যোগে। প্রয়াত শিল্পীর পরিবারও এই সেবা পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জায়েদ খান।