স্পেনে কর্মহীন কয়েক হাজার প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্পেনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় কয়েক হাজার বাংলাদেশি, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্পেনে লকডাউনের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে। এসময়ে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্পেনকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে স্মরণকালের এক ভয়াবহ বাস্তবতার সামনে। স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এই মহামারি কেড়ে নিয়েছে দেশটির ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন। গত দুই মাসে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি আক্রান্তের। গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় চার হাজার মানুষ।

দেশটির বাকি সব কার্যক্রম স্থবির করে দিয়ে কার্যত পুরো কাঠামোকেই আক্রান্ত করেছে মহামারি। এ কঠিন সময়ে সাহায্যপ্রার্থীর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাস্তায় বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। প্রতিদিন বাড়ছে বেকারত্ব। সরকারি তথ্য মতে, প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষের আয়ের উৎস থেমে গেছে। ৩০ লাখ কর্মজীবী মানুষ জরুরি পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক ঘরবন্দি হয়ে রাষ্ট্রের অনুদান ‘ইআরটি’ এর ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন। মহামারী কাটলেও প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে এদের অনেকে চাকরি হারাবেন। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত স্পেনের পর্যটন ব্যবসাও পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে। বড় আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে দেশটির ছোট-বড় দুই লাখের বেশি হোটেল, গেস্ট হাউজের মালিকরা। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে ইতোমধ্যে পর্যটক খাতে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শতাধিক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রয়েছেন উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে। সব ব্যয় মিটিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

প্রবাসীরা জানান, দেশটির সরকার হোটেল কিংবা গেস্ট হাউজ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেনি। তবে স্পেনের সঙ্গে অন্যান্য দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এমনকি এক শহর থেকে আরেক শহরে দেশটির নাগরিকদের ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পুরো স্পেন যখন পর্যটক-শূন্য তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

রাজধানী মাদ্রিদের ব্যবসায়ী বাংলদেশি জাকির হোসেন বলেন, “স্পেনে ব্যবসার ঠিক শুরুতেই করোনাভাইরাস হানা দেয়, যেটি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মাসিক ভাড়াই আছে ১০ লাখ টাকার বেশি। কর্মচারী ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক মিলিয়ে মাসিক ব্যয় কোটি টাকার ওপরে।”

জাকির মনে করেন, “এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলাতে যে ক্ষতি হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠতে অনেক বেগ পেতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে রেস্টুরেন্ট এবং টুরিস্ট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কয়েক হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী এসব ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং হাজার হাজার প্রবাসীর কর্মসংস্থান এসব প্রতিষ্ঠানে। ইতোমধ্যে কর্মহীন এসব প্রবাসীরা উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।”

দেশটিতে হোটেলে কাজ করেন বাংলাদেশি নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “দুমাস কর্মহীন হয়ে বাসায় অলস সময় কাটাচ্ছি। আর্থিক ও মানসিকভাবে বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে স্পেনে পর্যটক আসতে পারছে না। আর পর্যটক না আসতে পারলে হোটেলে কাজ শুরু করার কোন লক্ষণ দেখছি না।”

তিনি আরও বলেন, “রাজধানী মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় শতাধিক বাংলাদেশি প্রবাসী পর্যটক খাতের বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। সবকিছু ঠিক মতোই চলছিল। হঠাৎ করোনাভাইরাসের আঘাতে সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে।”

নিজাম জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার এসব ব্যবসায়ীদের সুদবিহীন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ইউরো ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এসব ঋণ সাময়িকভাবে সহায়ক হবে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে পুরো দেশ করোনাভাইরাসমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা স্বাভাবিক হবে না।

বার্সেলোনার রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বনি হায়দার মান্না বলেন, “আমাদের ব্যবসা সম্পূর্ণ পর্যটকনির্ভর। বিশ্বের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। চলতি বছর ব্যবসা আর হবে না। আর্থিক যে বিশাল ক্ষতি সেটা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। সত্যিকার অর্থে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।”