পৃথিবী শুধু মানুষের নয়, এবার ধরিত্রী দিবসে যেন তারই প্রমাণ!

করোনার প্রভাবে থমকে আছে সারা বিশ্ব। পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে সেই মানুষ আজ ঘরবন্দি। আর এ সুযোগে প্রকৃতিতে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছে এতদিন পালিয়ে বাঁচা প্রাণিরা। প্রকৃতিতে প্রাণীদের জন্য এটাই বোধয় প্রথম প্রাণ খুলে শ্বাস নেয়ার সুযোগ।

এ যেন বিধাতা নিজেই মানুষকে আটকে রেখে তার বাকি সৃষ্টিদের সুযোগ দিয়েছেন একটি উৎসব পালনের। যার মাধ্যমে বিধাতা নিজেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন পৃথিবী শুধু মানুষের নয়, এতে রয়েছে অন্য প্রাণীদেরও অধিকার। তাইতো আজ প্রকৃতির প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণেই পালিত হচ্ছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস।

প্রতি বছর ২২ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ধরিত্রী দিবস। মূলত পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বসবাসযোগ্য রাখতে সচেতনতা তৈরিতে দিবসটি উদযাপিত হয়। করোনার কারণে এবার যদিও নেই কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি।

বিশ্বব্যাপি গবেষকরা বলছেন,  মানুষের সীমাহীন অত্যাচারে বিশ্ব আজ জর্জরিত। এতে তৈরি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা দুর্যোগ। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফের স্তর গলে হাজার বছর জমে থাকা প্রাণঘাতি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। আজকের এ ধরীত্রি দিবস মানুষকে মেসেজ দিচ্ছে এ পৃথিবী শুধু মানুষের নয়, এতে রয়েছে সব প্রাণীর সমান অধিকার অধিকার। তাই পরিবেশ পরিবর্তন হলে করোনার এ শিক্ষা ধারণ করতে হবে মানুষকে।

চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্সের গবেষক নাসির উদ্দিন বলেন, ধরিত্রী দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় ১৯৭০ সালের কথা যে দিন প্রায় ২০ মিলিয়ন লোক সমবেত হয়েছিল পরিবেশ রক্ষায় তাগাদা দিতে। আজকে ঠিক ৫০ বছর পরে আমরা এমন এক অবস্থায় আছি এখন কয়েক কোটি মানুষকে বাড়ির ভেতরে অবস্থান করতে হচ্ছে পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের ব্যর্থতার জন্য।

তিনি বলেন, আজ আমরা কেউ নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারছি না। এজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। কাজেই ভবিষতে কোভিড-১৯ এর মতো মহামারি থেকে বাঁচতে হলে ধরিত্রীর প্রতি আমাদের আরও সহনশীল হতে হবে। আগামীর দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষকে এখনই তৈরি হতে হবে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জলবায়ুবিদ ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, সব ধর্মই মানুষকে সীমালঙ্ঘন করতে বারণ করেছে। অথচ আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে এত বেশি সীমা লঙ্ঘন করেছি যে নিজেদের বাঁচার পরিবেশটা নিজেরাই ধংস করেছি। আজ করোনার বাস্তবতায় তারই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। বরফ গলার কারণে নানা জীবাণু ছড়াচ্ছে। কিছু প্রাণী এসব জীবাণু ধ্বংসে ভূমিকা রাখতো আমরা তাদেরও বাঁচতে দিচ্ছি না। যার ফল এ ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া। তাই এখনি আমাদের নিজজেদের কৃতকর্মের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

মানুষকে শুধু পৃথিবীটা নিজের মনে করলে হবে না। নিজেদের স্বর্থেই বাঁচার সুযোগ দিতে হবে সব প্রাণীকে। আর এজন্য কমাতে হবে দূষণ, বলছিলেন জলবায়ুবিদ ড. সাইফুল ইসলাম।

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ধরিত্রী দিবসের প্রচলন করেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই সরকারিভাবে এ দিবস পালন করা হয়। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে বসন্তকালে আর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে শরতে ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। এ দিবস ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় এবং ১৪১ সংখ্যক জাতি দ্বারা আয়োজন করা হয়েছিল।