কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন

দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সব জায়গায় ছিল তাঁর সাবলীল বিচরণ।  অভিনয় দিয়ে কেড়েছেন অগণিত দর্শকের হৃদয়। জনপ্রিয় এই অভিনেতাকে হৃদয়ের গভীর থেকে স্মরণ করেন অনুরাগীরা। মৃত্যুর আট বছর পরও তাঁর ব্যবহৃত চশমা নিলামে তোলা হলে তিন লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকায় কিনে নেন এক ভক্ত। আজ (২৯ মে) বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা প্রয়াত এ অভিনেতার জন্মদিন।

হুমায়ুন ফরীদি ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এ টি এম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি ১৯৬৫ সালে পিতার চাকরির সুবাদে মাদারীপুরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

মাদারীপুর থেকেই নাট্যজগতে প্রবেশ করেন হুমায়ুন ফরীদি। তাঁর নাট্যাঙ্গনের গুরু বাশার মাহমুদ। তখন নাট্যকার বাশার মাহমুদের শিল্পী নাট্যগোষ্ঠী নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কল্যাণ মিত্রের ‘ত্রিরত্ন’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি সর্বপ্রথম দর্শকের সামনে অভিনয় করেন। এরপর এই সংগঠনের সদস্য হয়ে ‘টাকা আনা পাই’, ‘দায়ী কে’, ‘সমাপ্তি’, ‘অবিচার’সহ ছয়টি মঞ্চ নাটকে অংশ নেন। ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর বাবার চাকরির সুবাদে চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বাংলাদেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধে যোগ দেন তিনিও। যুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি তাঁর পড়াশোনা সম্পন্ন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হুমায়ুন ফরীদি নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সাহচর্যে আসেন। সেলিম আল দীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকের ‘তক্ষক’ চরিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ‘নীল নকশার সন্ধানে’ নাটকে অভিনয় করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম টেলিভিশন নাটক।

এরপর একে একে অভিনয় করেছেন ‘ভাঙনের শব্দ শোনা যায়’, ‘সংশপ্তক’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’ এবং ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো দর্শকপ্রিয় নাটকে। ‘হুলিয়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যিশু’, ‘আনন্দ অশ্রু’সহ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি।

‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন হুমায়ুন ফরীদি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

জন্মদিনে হুমায়ুন ফরীদিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন অসংখ্য অনুরাগী। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান এই অভিনেতা।