করোনাভাইরাসে দেশে ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৮২৮

দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের ৯০তম দিনে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৮২৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ জন মারা গেছেন। এসময়ে সুস্থ হয়েছেন ৬৪৩ জন।

শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এসব তথ্য জানান।

ডা. নাসিমা বলেন: গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৬৪৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৮৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ।

তিনি বলেন: নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ২ হাজার ৮২৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩৯১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮১১-এ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৬৪৩ জন। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ হাজার ৮০৪ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২০ শতাংশ।

ডা. নাসিমা বলেন, নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের ২৩ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভা‌গে ১২ জন, সিলেট বিভাগে তিনজন, রাজশাহী বিভাগে দুজন এবং বরিশাল ও রংপুর বিভাগে একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ১৭ জন মারা গেছেন হাসপাতালে এবং বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। বয়সের দিক থেকে ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চল্লিশোর্ধ্ব সাতজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১১ জন, ষাটোর্ধ্ব ছয়জন, সত্তরোর্ধ্ব দুজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের একজন মারা গেছেন।

বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনার পরীক্ষার ভিত্তিতে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৩৬৫ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ছয় হাজার ৯৪৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৭৩ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ৮৪৭ জন।

দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২।

গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ২৪৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৪৯৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৪০ হাজার ১১৪ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৭ হাজার ৩১৯ জন।

দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে করোনার বিস্তার রোধে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেবেন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করবেন। পানি ও তরল খাবার বেশি খাবেন। যারা সুস্থ হয়েছেন তারা মসলা দিয়ে পানি হালকা গরম করে খেয়ে উপকার পেয়েছেন। মধু, কালিজিরা খেয়েও অনেকে সুস্থ হয়েছে।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ৬৭ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি মানুষ। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৩২ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে বিভিন্ন মেয়াদে ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। দেশের ইতিহাসের দীর্ঘ এ ছুটির পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩১ মে থেকে অফিস-আদালত খোলা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে গণপরিবহনও।