দেশের স্বাস্থ্যখাত কতটা ভঙ্গুর প্রমাণ হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজ যখন করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীকে আক্রমণ করেছে, বাংলাদেশে আক্রমণ করেছে, তখন আমাদের স্বাস্থ্যখাত যে কত ভঙ্গুর সেটা প্রমাণিত হয়ে গেছে।’

বিএনপি নেতা আরো বলেন, ‘আমাদের সরকার উন্নয়নের কথা বলে, প্রবৃদ্ধির কথা বলে, কিন্তু কোনো প্রবৃদ্ধি, কোনো উন্নয়ন সফল হবে না, যদি না সত্যিকার অর্থেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তা থেকে লাভবান হয়। আজকে কী হয়েছে? এক শ্রেণির মানুষ অনেক উপরে উঠে গেছে। আরেক শ্রেণির মানুষ নিচে নেমে গেছে। এই অবস্থায় কখনো সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে পারে না।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ‘শহীদ জিয়ার কৃষি বিপ্লব‘ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ভুলে যাই যে, ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে ভয়াবহ রকম একটা দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, তখন দশ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। তখন খাদ্যের অভাব ছিল না। অমর্ত্য সেন তাঁর বইয়ের মধ্যে পরিষ্কার করে বলেছেন, এটা ছিল মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। অর্থাৎ একদিকে ম্যানেজমেন্টের সমস্যা, অন্যদিকে দুর্নীতি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জিয়াউর রহমান দায়িত্বে আসার পর কৃষির ওপর গুরুত্ব দিয়ে একদিকে সেচের ব্যবস্থা করলেন, অন্যদিকে উন্নত বীজের ব্যবস্থা করলেন, কৃষি উপকরণগুলো সহজলভ্য করলেন, সার-কীটনাশকের ব্যবস্থা করলেন, তখন আবার দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো। আরেকটি যুগান্তকারী কাজ তিনি করেছিলেন। পল্লী বিদ্যুৎ তিনি নিয়ে এসেছিলেন। গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল এই পল্লী বিদ্যুৎ।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকে যখন আমরা এই ভয়ংকর কোভিড-১৯ মোকাবিলা করছি এবং জনগণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সরকারের ভ্রান্ত-নীতির কারণে। তখন বার বার জিয়াউর রহমানের কথা মনে হয়। তাঁর নেতৃত্ব যদি আর কিছু দিন পেতাম, তাহলে হয়তো এই ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, এই ভঙ্গুর অর্থনীতি দেখতে হতো না। তার পরও আমরা আশাবাদী। জিয়ার আদর্শ, ১৯ দফা কর্মসূচি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এইগুলোকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারই যোগ্য উত্তরসূরি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসেছেন তখনই কৃষির ওপর সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষকেরা কৃষি ঋণের ব্যাপারে হয়রানি হতেন, ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে গ্রেপ্তার হতে হতো। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে সুদসহ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ২০০১ সালে একইভাবে ১০ হাজার টাকা মওকুফ করে দিয়েছিলেন।’

খালেদা জিয়া মসলার জন্য মাত্র দুই শতাংশ সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘তিনি কৃষি অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করেছিলেন। যারা ব্লক সুপারভাইজার ছিলেন, তাদেরকে তিনি কৃষি সহকারী হিসেবে পদমর্যাদা দিয়েছিলেন। তার সময় ডেইরি ফার্ম অনেক বেশি বিস্তার লাভ করেছিলেন। তিনি ছোট ছোট খামার মালিকদের অনুদান দিয়েছিলেন। পোল্ট্রি উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মাছ চাষিদের প্রণোদনা দিয়েছিলেন। আজকে কোভিড-১৯ চলে যাওয়ার পর যে মন্দা আসবে, সেখানে টিকে থাকার একমাত্র খাত হচ্ছে কৃষি। তাই কৃষির ওপর আমাদের সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষকদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

আলোচনায় আরো অংশ নেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যাম শামসুজ্জামান দুদু। আলোচনা সভাটি আয়োজন করে বিএনপি কমিউনিকেশন।