সেরা ২০ বাংলাদেশি সিনেমা

বাংলাদেশে সিডি-ডিভিডি, স্যাটেলাইট এলো। এরপর ১৯৯০ এর পরে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হলো। প্রযুক্তি যত এগিয়ে যেতে লাগলো, বাংলাদেশের সিনেমার উজ্জ্বলতা ততটাই কমতে শুরু করলো। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে খুব ধীরে হলেও বাংলাদেশের মৌলিক সিনেমার চর্চা এগিয়ে যাচ্ছিল। চলচ্চিত্রে ফুটে উঠছিল সমাজ, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি। আন্তর্জাতিক উৎসবেও অংশ নিচ্ছিল এসব ছবি। কিন্তু মাঝের বেশ কিছুটা সময় বিদেশি ছবির আগ্রাসনে বাংলাদেশের সিনেমা হারাতে শুরু করলো দর্শকপ্রিয়তা। তবে ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সিনেমা বিশ্বের কাছে পৌঁছাতে শুরু করলো আবার। তবে সেসব সিনেমায় প্রায়ই সত্যজিৎ রায় কিংবা ঋত্বিক ঘটকের ছায়া থাকতো।

নতুন শতাব্দীতে বাংলাদেশের সিনেমা ‘আর্টিসানাল’ থেকে ‘গ্লোবাল’ পর্যায়ে গেল। প্রচলিত বিষয়বস্তু থেকে বের হয়ে নতুন নতুন গল্প নিয়ে তৈরি হওয়া শুরু হলো সিনেমা। বাস্তব জীবনের নানা জটিলতার ফুটিয়ে তোলা হলো এসব সিনেমায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চলচ্চিত্র আলোচক ফাহমিদুল হকের বাছাই করা একুশ শতকের সেরা বিশটি সিনেমার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ‘এশিয়ান মুভি প্লাস’ ওয়েবসাইটে। তিনি সিনেমা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু ভালো গল্প অথবা দর্শকপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেননি, সংস্কৃতি এবং সমাজ চিত্রায়নেও গুরুত্ব দিয়েছেন। এই বিশটি সিনেমার মাঝে তিনটি ডকুমেন্টারিও রেখেছেন তিনি।

লালসালু (তানভীর মোকাম্মেল, ২০০১): লালসালু তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর বিখ্যাত লালসালু উপন্যাস অবলম্বনে ২০০১ সালে এটি তৈরি হয়েছে। ছবিটি একাধিক জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ।

মাটির ময়না ( তারেক মাসুদ, ২০০২): মাটির ময়না ২০০২ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত একটি বাংলাদেশী ফিচার চলচ্চিত্র। এটি ২০০২ সালের বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পায়। কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত প্রথম বাংলাদেশী সিনেমা এটি। এই চলচ্চিত্রের কাহিনী ও চিত্রনাট্য রচনা এবং পরিচালনা করেছেন তারেক মাসুদ। প্রযোজক করেছেন ক্যাথরিন মাসুদ। অভিনয়ে ছিলেন, নুরুল ইসলাম বাবলু, রাসেল ফরাজী, রোকেয়া প্রাচী, শোয়েব ইসলাম, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, লামিসা রিমঝিম প্রমুখ।

শঙ্খনাদ (আবু সাইয়ীদ, ২০০৪): শঙ্খনাদ আবু সাইয়ীদ পরিচালিত ২০০৪ সালের বাংলাদেশী নাট্য চলচ্চিত্র। বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক নাসরীন জাহান রচিত উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, কে এস ফিরোজ, নাজমা আনোয়ার, ফজলুর রহমান বাবু, রেবেকা দিপা, মিরানা জামান প্রমুখ।

আহা! (এনামুল করিম নির্ঝর, ২০০৭): স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝরের প্রথম সিনেমা ‘আহা’। জনবহুল ঢাকা শহরের দ্রুত বদলে যাওয়ার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এই সিনেমা। পুরানো বাড়িঘর ভেঙ্গে তৈরি হচ্ছে বহুতল ভবন। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই ছবিটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, ফজলুর রহমান বাবু, শহিদুল আলম সাচ্চু, ইয়াসমিন বিলকিস সাথী, ফেরদৌস (অতিথি শিল্পী), প্রজ্ঞা লাবনী, খালেদ খান, গাজী রাকায়েতসহ আরও অনেকে। ‘আহা!’ ছবিটি পরিচালনা করে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ পরিচালক এনামুল করিম নির্ঝর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এ শ্রেষ্ঠ পরিচালক ২০০৭ লাভ করেন। এবং এটা সহ ছবিটি মোট চারটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।

লোহাখোর (শাহিন দিল-রিয়াজ, ২০০৭): বাংলাদেশি ডকুমেন্টারি নির্মাতা শাহিন দিল-রিয়াজ থাকেন বার্লিনে। তার তৈরি এই ‘লোহাখোর’-এ গরিব কৃষকদের গল্প বলা হয়েছে যারা উত্তরবঙ্গের খরার কারণে দক্ষিণবঙ্গ এসে জাহাজ ভাঙ্গার কাজ খুঁজে নেয়।

রানওয়ে (তারেক মাসুদ, ২০১০): এয়ারপোর্টের রানওয়ের কাছে বসবাসরত এক গরীব পরিবারের গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘রানওয়ে’ সিনেমার কাহিনী। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক টানাপড়েন দেখানো হয়েছে ছবিতে। তারেক মাসুদ পরিচালিত এই ছবিটির কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালের অক্টোবরে, আর তা শেষ হয় ২০০৯ সালের এপ্রিলে। রানওয়ে ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে প্রথম মুক্তি পায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর বেতিলের স্বপ্নপুরী সিনেমা হলে।

আমার বন্ধু রাশেদ (মোরশেদুল ইসলাম, ২০১১): আমার বন্ধু রাশেদ ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। ১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত একই নামের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে মমন চলচ্চিত্র ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।

টেলিভিশন (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ২০১৩): টেলিভিশন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত চতুর্থ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। যৌথভাবে এই ছবির কাহিনী লিখেছেন আনিসুল হক ও ফারুকী। ছবিয়াল, স্টার সিনেপ্লেক্স ও মোগাদর ফিল্ম (জার্মানি) এর যৌথ প্রযোজনায় এই ছবিতে প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা।

চলচ্চিত্রটি নির্মাণাধীন থাকা কালে গুটেনবর্গ ফিল্ম ফেস্টিভালে চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার লাভ করে এবং মুক্তির আগেই জিতে নেয় ২০১২ সালের এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর পোস্ট প্রোডাকশন পুরস্কার। এছাড়াও ৮৬তম একাডেমী অ্যাওয়ার্ড (অস্কার) এর বিদেশি ভাষার সিনেমা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য চলচ্চিত্রটিকে বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এছাড়াও ১৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও ‘এশিয়ান সিলেক্ট’ ক্যাটাগরিতে সেরা সিনেমা হিসেবে ‘নেটপ্যাক পুরস্কার’ পায় এটি। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৩ এশিয়া-প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডে (অ্যাপসা) ফার্স্ট জুরি গ্র্যান্ড পুরস্কার অর্জন করে চলচ্চিত্রটি।

শুনতে কি পাও! (কামার আহমেদ সিমন, ২০১২): কামার আহমাদ সাইমন পরিচালিত ও সারা আফরীন প্রযোজিত এই নির্মাণ করা হয়েছে ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা পরবর্তী বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার উপর। ‘সিনেমা দ্যু রিল’-এ গ্রাঁ প্রি এবং মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্বর্ণশঙ্খ’ সহ মোট নয়টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছে ‘শুনতে কি পাও’। ‘শুনতে কি পাও’ ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪-তে বাংলাদেশে মুক্তি পায়। দর্শকনন্দিত হয়ে চার সপ্তাহ প্রদর্শিত হয় এই ডকুমেন্টারিটি।

আন্ডার কনস্ট্রাকশন (রুবাইয়াত হোসেন, ২০১৫): আন্ডার কনস্ট্রাকশন নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমা। এ ছবিতে সমকালীন ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপটে রয়া নামের মধ্যবিত্ত এক নারীর আত্ম-অনুসন্ধানের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৫ সালে সিয়াটল চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ারের পর জানুয়ারি ২১, ২০১৬ বাংলাদেশে ছবিটি মুক্তি পায়। এছাড়াও ফ্রান্সে মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি ২০ টির অধিক সিনেমা হলে কয়েক সপ্তাহ যাবত প্রদর্শিত হয়।

আয়নাবাজি (অমিতাভ রেজা চৌধুরী, ২০১৬): আয়নাবাজি অপরাধধর্মী থ্রিলার চলচ্চিত্র। কনটেন্ট ম্যাটারস লিমিটেড প্রযোজিত এই ছবির কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন গাউসুল আলম শাওন ও অনম বিশ্বাস। এই চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রগুলোতে অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী, মাসুমা রহমান নাবিলা এবং পার্থ বড়ুয়া। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের বদলে ভাড়ায় জেলখাটা আয়না (চঞ্চল), তার বান্ধবী হৃদি (নাবিলা) এবং ক্রাইম রিপোর্টার সাবেরের (পার্থ) জীবনের প্রেম-আনন্দ-বেদনা নিয়ে অপরাধ জগতের ছায়ায় এগিয়েছে চলচ্চিত্রটির কাহিনী।

আয়নাবাজি চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ১৭ মে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্ম বিভাগে প্রদর্শিত হয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি পায়। নভেম্বর মাসের ১২ থেকে ১৫ তারিখ মানহেইম-হেইডেলবের্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির ৪টি প্রদর্শনী হয়। ৭টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় এই চলচ্চিত্রটি।

জন্মসাথী (শবনম ফেরদৌসী, ২০১৬): দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক যুদ্ধশিশুকেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, আবার কেউ জন্মপরিচয় গোপন রেখে বেড়ে ওঠেন এদেশেই। নিজের দেশে আত্মপরিচয় সংকটে জীবনযাপন করা এইসব মানুষের সন্ধান করে তাদের খুঁজে বের করেন নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী। তিনজন যুদ্ধশিশুকে খুঁজে বের করে তাদের তাদের পরিণতির গল্প শুনেন এবং সে গল্প থেকে তৈরি করেন ‘জন্মসাথী’ প্রামাণ্যচিত্র। এটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ এর আসরে সেরা প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে পুরস্কার পায়। এটি যৌথভাবে প্রযোজনা করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এটি ১৫তম মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয়।

অজ্ঞাতনামা (তৌকির আহমেদ, ২০১৬): ‘অজ্ঞাতনামা’ সিনেমাটি পরিচালনার পাশাপাশি এর গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন তৌকির আহমেদ নিজেই। চলচ্চিত্রটি ২০১৫ সালে একুশে বইমেলায় তার প্রকাশিত ‘অজ্ঞাতনামা’ বইয়েরই চলচ্চিত্রায়ন। মানব পাচারের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই ছায়াছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, মোশাররফ করিম, ফজলুর রহমান বাবু ও নিপুণ আক্তার।

চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ১৭ মে ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাণিজ্যিক শাখায় প্রদর্শিত হয়। এছাড়া চলচ্চিত্রটি ইতালির গালফ অফ ন্যাপলস ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে ২১ মে প্রদর্শিত হয় এবং জুরি স্পেশাল মেনশন পুরস্কার অর্জন করে। ৮৯তম একাডেমি পুরস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগের মনোনয়নের জন্য বাংলাদেশ থেকে নিবেদন করা হয় ‘অজ্ঞাতনামা’।

লাইভ ফ্রম ঢাকা (আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, ২০১৬): তিন বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে ঢাকায় মুক্তি পেয়েছে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’। ৯৪ মিনিট ব্যাপ্তির ছবি ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’তে দেখানো হয়েছে শেয়ার বাজারে পুঁজি হারিয়ে ঢাকা থেকে পালাবার পথ খুঁজে ফেরা এক প্রতিবন্ধী যুবকের গল্প। যে নৈতিকতা ও আত্মরক্ষার মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার জটিল পরিস্থিতিতে পড়ে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তফা মনোয়ার। ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র প্রিমিয়ার হয়েছিল। সেখানে সেরা পরিচালক হিসেবে আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ ও সেরা অভিনেতা হিসেবে মোস্তফা মনোয়ার পুরস্কার জিতেছেন।

ডুব (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ২০১৭): মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বহুল আলোচিত ছবি ডুব। ইরফান খান এ সিনেমায় জাভেদ হাসান চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। জীবনের মধ্যাহ্নের সঙ্কটে তিনি তার মেয়ে সাবেরির বাল্যবন্ধু নিতুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। যা তার পরিবারে ভাঙ্গনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সিনেমায় সাবেরি চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা, নিতু চরিত্রে পার্নো মিত্র এবং মায়া চরিত্রে রোকেয়া প্রাচী অভিনয় করেছেন। জাজ মাল্টিমিডিয়া, এসকে মুভিজ এবং ইরফান খান যৌথভাবে এই সিনেমা প্রযোজনা করেন। অস্কারের ৯১তম আসরে বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছে ডুব।

খাঁচা (আকরাম খান, ২০১৭): কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক রচিত ‘খাঁচা’ অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্বে বাংলার হিন্দু পরিবারগুলোর ভারতে পাড়ি জমানোর গল্প দেখানো হয়েছে। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে দেশভাগের যন্ত্রণা তুলে ধরেছেন নির্মাতা। এতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, আজাদ আবুল কালাম, মামুনুর রশীদ, আরমান পারভেজ মুরাদসহ অনেকে।

স্বপ্নজাল (গিয়াসউদ্দিন সেলিম, ২০১৮): নদীতীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠা ইলিশ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্বপ্নজাল চলচ্চিত্রটির গল্প। কঠোর বাস্তবতায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অপু ও শুভ্রা নামের দুই তরুণ তরুণী। ছবিতে শুভ্রার চরিত্রে আছেন পরীমনি, আর অপু চরিত্রে ইয়াশ রোহান। বেঙ্গল ক্রিয়েশন্স ও বেঙ্গল বার্তার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘স্বপ্নজাল’ এর কাহিনী ও চিত্রনাট্য করেছেন নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম নিজেই।

কমলা রকেট (নুর ইমরান মিঠু, ২০১৮): কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের দুটো ছোট গল্প ‘মৌলিক’ এবং ‘সাইপ্রাস’-এর কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির পুরো শুটিং হয়েছে একটি লঞ্চে। ছবিতে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, তৌকীর আহমেদ, জয়রাজ, সামিয়া সাঈদ, সেওতি, ডমিনিক গোমেজ, বাপ্পা শান্তনু, সুজাত শিমুল, শহীদুল্লাহ সবুজ ও আবু রায়হান।

আলফা (নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ২০১৯): ঢাকার এক রিকশা পেইন্টারকে ঘিরে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের এর এই চলচ্চিত্রটির গল্প আবর্তিত হয়েছে, যার চোখে ফুটে ওঠে সমাজের নানা অসঙ্গতি। যান্ত্রিক শহরে বাস্তবতার সঙ্গে তার মানিয়ে ওঠা ও অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে তার বেঁচে থাকার গল্প বর্ণিত হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন আলমগীর কবির, দিলরুবা দোয়েল, হীরা চৌধুরী, এটিএম শামসুজ্জামানসহ আরো অনেকে।

মেড ইন বাংলাদেশ (রুবাইয়াত হোসেন, ২০১৯): বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে পোশাক শিল্পের যে ভূমিকা আছে তার আলোকে দৃঢ়চেতা নারী পোশাক শ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প বলা হয়েছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু, নভেরা হোসেন, দীপান্বিতা মার্টিন, পারভীন পারু, মায়াবি মায়া, মোস্তফা মনোয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও সামিনা লুৎফা প্রমুখ। দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতা চৌধুরী ও ভারতের শাহানা গোস্বামী।