সীমান্ত খুলছে ইউরোপের দেশগুলো, শুরু হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন পর্যটন

ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি খুলে দিচ্ছে নিজ নিজ দেশের সীমান্ত। শুরু হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন পর্যটন। কিন্তু একই সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন।

গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ক্রমে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে ইউরোপ। ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির মতো দেশগুলোতে ধীরে ধীরে লকডাউন উঠেছে। ফ্রান্স নিজেকে ‘গ্রিন জোন’ বলে চিহ্নিত করেছে। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।

করোনাকালে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তা ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হয়। তবে আজ সোমবার তা সবার জন্য খুলে দেওয়া হলো। অর্থাৎ সীমান্ত পেরোনোর সময় আর কোনো বাধার মুখে পড়তে হবে না সাধারণ মানুষকে।

ইউরোপে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়ে গেছে। এ সময়টায় সবচেয়ে বেশি পর্যটক দেশ-বিদেশে বেড়াতে যান। ইতালি বা ফ্রান্সের মতো দেশে এ সময়টা অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গ্রীষ্মকালীন পর্যটন ব্যবসায় বিপুল লাভ করে এ দেশগুলো। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, করোনাকালে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছিল। সে কথা মাথায় রেখেই আর সময় নষ্ট করা হয়নি। সীমান্ত খুলে দিয়ে পর্যটন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, যাতে দ্রুত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

গতকাল রোববার ফ্রান্সের সরকার জানিয়ে দিয়েছে, রেস্তোরাঁ, পানশালা সবকিছুই খুলতে পারে আগের মতো। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বলা হয়েছিল, কেবল খোলা আকাশের নিচেই খাবার দিতে পারবে রেস্তোরাঁগুলো। চার দেয়ালের ভেতর কাউকে বসতে দেওয়া যাবে না। গতকাল রোববার থেকে সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রও। তবে একই সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। সবাই যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলেন, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, সতর্ক না থাকলে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে দেশে। তখন আবার সবকিছু বন্ধ করে দিতে হবে। এটা মাথায় রাখা দরকার।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে চিন্তিত জার্মানিও। দেশের চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল দেশবাসীকে এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছেন। বস্তুত আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জার্মানিতে একটি অ্যাপ চালু হয়ে যেতে পারে। অ্যাপটি ডাউনলোড করলে সবাই জানতে পারবেন, কোনো করোনায় আক্রান্তের সংস্পর্শে তিনি এসেছেন কি না। জার্মানির বিভিন্ন পর্যটনস্থল নিয়েও উদ্বিগ্ন প্রশাসন। কারণ, দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা সেখানে এলে নতুন করে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এবং একবার করোনা ছড়াতে শুরু করলে তাতে লাগাম টানা মুশকিল। ফলে সীমান্ত ও পর্যটনস্থল খুলে দিলেও পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে জার্মান প্রশাসন।

ইউরোপ যখন ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে, তখন আবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে চীন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেখানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঢুকে পড়েছে। বেইজিংয়ের একটি অংশে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার থেকেই তা কার্যকর হয়েছে। মাঝে চীনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দশের নিচে নেমে গিয়েছিল। গতকাল রোববার আবার তা প্রায় ৬০ ছুঁয়ে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হঠাৎ করেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সতর্ক না হলে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করবে সংক্রমণ। সে কারণেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯ লাখ ৮০ হাজার। মৃত্যু হয়েছে চার লাখ ৩৫ হাজার জনের। গত এপ্রিল থেকে ধরলে গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে কম মানুষ করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।