বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু প্রতিদিনই বাড়ছে। এর মধ্যে মৃত্যুর হার একটু কমতির দিকে মনে হলেও সংক্রমণের হার কোনোভাবেই কমছে না। বরং, দিনে দিনে তা বাড়তির দিকে। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ৪ লাখ।

চীনের উহানে গত ৩১ ডিসেম্বর মানুষের অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সে হিসাবে সংক্রমণ ছড়ানোর ১৬৮ দিনে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়াল।

ওয়ার্ল্ডোমিটার ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ৮১ লাখ ১২ হাজার ৯৩৩ ছাড়ায়। সংক্রমণ ছড়িয়েছে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে। ওই সময় পর্যন্ত এই মহামারিতে মৃত্যু ৪ লাখ ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ৪২ লাখ ১৩ হাজার রোগী।

করোনা মহামারির বিস্তারের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শনাক্তের তারিখের ৬৭ দিনের মাথায়, গত ৬ মার্চ বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ায়। এর ২০ দিনের মাথায় রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। তার আট দিন পর, গত ২ এপ্রিল সংক্রমিত রোগী ১০ লাখ হয়ে যায়। ১৫ এপ্রিল, অর্থাৎ ১৪ দিনের মাথায় রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়ায়। ২১ এপ্রিল রোগী ২৫ লাখ হয়। তার ঠিক ৩০ দিনের মাথায়, ২০ মে রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ হলো, এবং ১৫ জুনের মধ্যে সংখ্যাটি এখন ৮০ লাখ ছাড়িয়ে ১ কোটির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে করোনায় দৈনিক মৃত্যু কিছুটা কমবেশি হলেও সংক্রমিত রোগী শনাক্তের হার কমছে না। এটি বিবেচনায় নিয়েই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার জোরালো আভাস এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক সংক্রমিত রোগী শনাক্তের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১২ মে থেকে এই সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজারের ঘরে। এর মধ্যে ১৫ মে দৈনিক রোগী শনাক্তের সংখ্যা প্রায় লাখ ছুঁয়ে যায়। ওই দিন শনাক্ত হয়েছিলেন ৯৯ হাজার ৪০১ জন। অবশ্য এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন গত ২৪ এপ্রিল, ১ লাখ ১ হাজার ৮৮৪ জন।

অঞ্চল হিসেবে করোনার রোগী সবচেয়ে বেশি রয়েছে উত্তর আমেরিকায় এই অঞ্চলে গতকাল পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ২৫ লাখের বেশি। মারা গেছেন ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি ।এর মধ্যে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রেই রোগী রয়েছেন ২১ লাখ ৮২ হাজারের বেশি। মারা গেছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার।

উত্তর আমেরিকার পর সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে ইউরোপে।এই অঞ্চলে গতকাল পর্যন্ত ২২ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার।

অন্যদিকে ল্যাটিন আমেরিকার দেশে হঠাৎ করে করোনা সংক্রামণ রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এই অঞ্চলে গতকাল পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬১ হাজার ৫৪১ জন।

এশিয়া মহাদেশে রোগী রয়েছে প্রায় ১৭ লাখ। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪১ হাজার ১৫১। রোগীর সংখ্যার দিক থেকে এই অঞ্চলে শীর্ষে রয়েছে ভারত। দেশটিতে রোগী শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ। মারা গেছেন প্রায় ১০ হাজার।

তবে মৃত্যুর হিসাবে দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে ইরান। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজারের বেশি।

পাকিস্তানে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার। মৃত্যু প্রায় ৩ হাজার। তবে এশিয়ার যে দেশ থেকে করোনা মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই চীনে এক মাসের বেশি সময় ধরে করোনায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজারের কিছু বেশি। মারা গেছেন প্রায় ৭ হাজার। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ৭৩ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দেশটিতে মারা গেছেন ১৫’শ। মৃত্যুতে এই অঞ্চলে শীর্ষে রয়েছে মিসর। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ১৭’শ রোগী। মিসরে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৬ হাজার।

ওশেনিয়া অঞ্চলে রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ৮ হাজারের কিছু বেশি। মারা গেছেন ১২৪ জন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায়ই মারা গেছেন ১০২ জন। দেশটিতে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজারের বেশি। নিউজিল্যান্ডে শনাক্ত হওয়া দেড় হাজার রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ২২ জন। এই দেশে এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৫ জন রোগী। বাকিরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন।