করোনার শঙ্কার মধ্যেও ঢাকার ২৪ স্থানে বসবে কোরবানির পশুর হাট

আসছে ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে মোট ২৪টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪টি আর উত্তর সিটিতে ১০টি স্থান নির্ধারণ করে ইজারার জন্য বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশুর হাট থেকে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা তৈরি হবে।

গত ২৫ মে বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউনের মধ্যে থেকে বিধি-নিষেধ মেনে ঘর থেকে ওই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে বাধ্য হয়েছিল মুসল্লিরা। এদিকে বরাবরের মতো পশুর হাটকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি।

বাংলাদেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই করা হয় তার একটি বড় অংশের পশু শুধু ঈদুল আজহাতেই জবাই করা হয়। সেজন্য অন্তত এক কোটির উপরের জনসংখ্যার শহর ঢাকাতেও প্রচুর পশু জবাই করা হয় প্রতি বছর। ফলে ২৪টি পশুর হাটের প্রয়োজনীতা অনুভব করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দুই সিটি।

ঢাকার দক্ষিণ সিটি গত ১৪ জুন ১৪টি হাট ও উত্তর সিটি ১ জুন ১০টি হাটের অস্থায়ী ইজারার জন্য দরপত্র ডেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পশুর হাট করোনা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে দুই সিটি করপোরেশনকে।

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনাকালেও তো কোরবানির ঈদ থেমে থাকবে না। সেজন্য আমরা ১৪টি স্থান চূড়ান্ত করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্রের আহ্বান জানিয়েছি। সবাই দরপত্র জমা দিলে তা যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপর বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আমরাও সেই অনুযায়ী কাজ করে যাব।’

উত্তরের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১ জুন আমরা দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আমাদের হাটের সংখ্যা ১০টি। সবাই দরপত্র জমা দিলে তা যাচাই-বাছাই করে হাট ইজারার বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সিটি করোপোরেশন।’

পশুর হাট থেকে সংক্রমণ আরো দ্রুত ছড়াবে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘গণজামায়েত হলে তো সংক্রমণ হবে সেটা আমরা সেই করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই বলে আসছি। আর পশুর হাটগুলো তো প্রচুর মানুষ থাকে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসেন। তাদের কার শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি আছে সেটা বোঝা মুশকিল। সেজন্য করোনা সংক্রমণের সুযোগ তো থাকছেই। যদিও হয়তো কিছু করার থাকবে না। কোরবানির কারণে পশুর হাট বসবে। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনকেই করোনা মোকাবিলায় যথাযোগ্য ব্যবস্থা হাতে নিতে হবে। যাতে করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু বেচাকেনা করা যায়।’

দক্ষিণ সিটির জন্য নির্ধারিত পশুর হাটগুলো হলো

উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠ এলাকার খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচরের ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা বাঁধ পর্যন্ত খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকার খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠ সংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক-স্ট্যান্ড এলাকা, আফতাব নগরের (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি,এইচ এবং সেকশন-১ ও ২-এর খালি জায়গা, আশুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা এবং লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের আশপাশের খালি জায়গা।

উত্তর সিটির জন্য নির্ধারিত পশুর হাটগুলো হলো

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে গাবতলীতে। পাশাপাশি উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের  ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) পশুর হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, বাড্ডা ইস্টার্ন  হাউজিংয়ের (আফতাবনগর) ব্লক-ই সেকশন-৩ এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কের পাশে পুলিশ লাইন্সের খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ ওয়ার্ড-৬ এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেকটরের বৃন্দাবন থেকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গার পাশের খালি জায়গা এবং ভাসানটেক সড়কের খালি জায়গা।