সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

‘যমুনা ও পদ্মা নদীর পানি বাড়ার ফলে মানিকগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পদ্মা ও যমুনায় পানি বাড়ার ফলে কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতিসহ জেলার অভ্যন্তরীণ নদীতেও পানি বাড়ছে। পানির স্রোতে পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০টি ইউনিয়নের অসংখ্য পরিবার। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট। ফসলি জমিতে পানি ঢুকে আউশ, বোনা আমন ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) ফারুক আহমেদ বলেন, ১০ জুলাই থেকে দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলায় যমুনা এবং হরিরামপুরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। গত ১২ ঘণ্টায় যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার বেড়ে তা বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান নাইদুর রহমান বলেন, পানি বাড়ার ফলে হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, সূতালড়ি, লেছড়াগঞ্জ, ধূলশুড়া, আজিমনগর, হারুকান্দি, বয়ড়া, কাঞ্চনপুর ও গোপীনাথ ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। কয়েক হাজার বাড়ির ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষ নানা সংকটে পড়েছে। পানির স্রোতে ঝিটকা-হরিরামপুর সড়কের পাটগ্রাম এলাকায় ভেঙে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। হরিরামপুর উপজেলা পরিষদে পানি ঢুকে পড়েছে। এভাবে আরও দুদিন পানি বাড়লে সকল কার্যালয়ের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলতে হবে বলে জানান তিনি।

দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম রাজা বলেন, বাঁচামারা, চরকাটারী, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর ইউনিয়নের এক হাজারেরও বেশি সংখ্যক পরিবারের বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়েছে। দুই শতাধিক পরিবারের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। দুর্দশার মধ্যে দিন কাটছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলাসহ জেলার অন্য উপজেলার বানভাসি মানুষ খাবার-সংকট, জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানি, নারীদের স্বাস্থ্য সামগ্রী সংকটসহ নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন। বন্যার পানি থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদিপশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। পানিতে চারদিক তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, বন্যায় এ পর্যন্ত ৭৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার ৭ হাজার ৩০৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার প্রভাবে ৬৮৮টি পরিবার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় ১৩০ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।  বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্র এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।,