ঈদে হারুন রুশোর পরিচালনায় ৬ নাটক

দীর্ঘদিন যাবৎ বিনোদন জগতে পদচারণা হারুন রুশোর। করোনা কালে বেশ কিছু ভালো কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে সময়ের একজন সফল নাট্যকার ও পরিচালক হারুন রুশো । কথায় মধ্যে উঠে আসে তার কর্মমুখর জীবনের নানা অধ্যায়। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন আগামী দিনগুলোর জন্য পরিকল্পনাও। নাটকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে-

প্রশ্ন : কেমন আছেন?

হারুন রুশো : উপরওয়ালার কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি এখন পর্যন্ত আমাকে সুস্থ রেখেছেন।

প্রশ্ন : মিডিয়া অঙ্গনে কাজ না করলে কি করতেন?

হারুন রুশো : হয়তো চাকরি। কিন্তু যাই করি না কেন সংস্কৃতির সাথে যুক্ত থাকতাম নিশ্চিত।

প্রশ্ন : করোনা পরিস্থির মধ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা কি রকম?

হারুন রুশো : কিছুটা ভয়, কিছুটা অস্বস্তি হয়তো আছে কিন্তু লড়াই করার তীব্র মানসিকতা দেখেছি সবার মধ্যেই । বৈরি পরিবেশে টিকে থাকার চিরন্তন মন্ত্রই আমাদেরকে করোনা পরিস্থিতেও কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

প্রশ্ন : এবার ঈদুল আযহায় আপনার নির্মিত কয়টি নাটক আসছে, নাটকগুলোর নাম?

হারুন রুশো : ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমি ছয়টি নাটক নির্মাণ করেছি । নাটকগুলোর নাম হচ্ছে- জুতা খোলা নিষেধ, মাল্টিপ্লাগ, ওল্ড বাইক, আব্দুল বারেক জাপান যাবে, আউট অব বক্স । এছাড়া কিছুদিন আগে বানানো সেলিব্রেটি কাউ নামের একটি নাটকও এবার ঈদে অনএয়ার হতে যাচ্ছে।

                       নাটক :- জুতা খোলা নিষেধ

প্রশ্ন : আপনার নির্মিত নাটক গুলো কোন কোন টিভি চ্যানেলে  দেখতে পাবো?

হারুন রুশো :  বৈশাখী, নাগরিক টেলিভিশনসহ আরও কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে নাটকগুলো অনএয়ার হবে।

প্রশ্ন : ইউটিউবে আপনার একটি নাটক প্রায় ১০ মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

হারুন রুশো :  সত্যি বলতে আমি ইউটিউব সম্পর্কে খুব ভালো বুঝি না। মানে ঠিক কোন নাটকটা দর্শক গ্রহণ করবে আর কোনটা গ্রহণ করবে না এ সম্পর্কে আমার ধারণা খুব স্পষ্ট না । আমি আসলে মনের আনন্দেই নাটক নির্মাণ করে থাকি।  কিন্তু বর্তমান সময়ে ইউটিউব ভিউকে অস্বীকার করারও কোনো উপায় নেই । সেদিক থেকে কোনো নাটকের এককোটি ভিউ নিঃসন্দেহে নির্মাতার জন্য অনুপ্রেরণা।

প্রশ্ন : নাটকের বাজেট প্রসেঙ্গে আপনার অভিমত কি?

হারুন রুশো : সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়েছে আর উল্টোস্রোতে কমেছে নাটকের বাজেট, ফলশ্রুতিতে তার প্রভাব পড়েছে আমাদের কাজে । সোজা কথায় বলতে গেলে, এখন নাটকের অবস্থা হলো যেমন গুড় তেমন মিষ্টি । নাটকের বাজেট বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

প্রশ্ন : নাটকের মান উন্নয়নে চ্যানেলগুলোর করণীয়  কী বলে আপনি মনে করেন?

হারুন রুশো: নাটকের মান উন্নয়নে চ্যানেলের ভূমিকাই প্রধান । কিন্তু মনে রাখতে হবে একজন তখনই আরেকজনকে সাহায্য করতে পারে যখন তার নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চ্যানেলগুলো নিজেরাই আছে অনেক বিপদে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাদের প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। সারাদেশে কোটি কোটি দর্শক টেলিভিশন দেখছে ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, প্রতিমাসে গুণতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা । অথচ কোনো চ্যানেল সেখান থেকে একটি টাকাও পায় না। তাদের চ্যানেল দেখিয়ে মধ্যসত্ত্বভোগীরা হাজার হাজার কোটি টাকা কামাচ্ছে আর চ্যানেলেগুলোকে ছুটতে হচ্ছে বিজ্ঞাপনের পিছনে ! নাটক কিন্তু টেলিভিশন প্রোগ্রামের একটি অংশমাত্র, সেক্ষেত্রে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে না পারলে কোনোদিনও নাটকের মান বাড়বে না।

প্রশ্ন : আপনার প্রিয় কাজ কোনটি?

হারুন রুশো: সব পাখি ঘরে ফেরে না, হারমোনিয়াম, জলের তলে কার ছায়া, উড়ালপঙ্ক্ষী, অস্থিমজ্জা পাঁজর করোটির কথা।

                            নাটক :-  হারমোনিয়াম

প্রশ্ন : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?

হারুন রুশো: আমি শুধু ভালো কাজ করে যেতে চাই।

প্রশ্ন : আপনার দৃষ্টিতে নাটকের ভবিষ্যৎ কী ছিল?

হারুন রুশো: আমি আশাবাদী মানুষ, জানি না কিভাবে হবে কিন্তু কেনো যেনো মন বলে একদিন আমাদের নাটক আবারও শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে । দর্শক আমাদের নাটক দেখে হাসবে, কাঁদবে, একাত্ম হবে।

              নাটক :- জলের তলে কার ছায়া

প্রশ্ন : নতুন প্রজন্মের অভিনয় শিল্পীরা কেমন?

হারুন রুশো: নতুন যারা আসছে তাদের অধিকাংশেরই স্কুলিং খুব দুর্বল । সে দোষ তাদের না, আমরা আসলে সেই পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি । সবার মধ্যে হয়তো একটা বিষয় গেঁথে গেছে- চাইলেই অভিনয় করা সম্ভব, এটা কঠিন কিছু না । কিন্তু অভিনয় যে শেখার বিষয়, অধ্যাবসায়ের বিষয় এই কঠিন সত্যকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি । ফলে এখন যে কেউ চাইলেই অভিনয়ের সাথে যুক্ত হতে পারছে, এর দায় আমাদের সবার ।

               নাটক :- উড়ালপঙ্ক্ষী

প্রশ্ন: সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনে নাটক কতটা ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

হারুন রুশো :  বর্তমান সময়টা রেঁনেসার যুগ নয় কাজেই নাটক দেখে সমাজের আদর্শ পরিবর্তিত হবে এই ভাবনাটা নিতান্তই বাড়াবাড়ি । আমার কাছে মনে হয় নাটককে বিনোদন হিসেবে নেয়াই ভালো । তবে মনে রাখতে হবে গণমাধ্যমে ভালো কাজ হচ্ছে পানির মতো যা শুষে নিতে একটু সময় লাগে আর খারাপ কাজ হচ্ছে স্পিরিটের মতো চোখের পলকে শুষে নেবে । এখানে দীর্ঘ সময় ধরে ভালো কিছু দেখালেও তার প্রভাব পড়ে খুব সীমিত কিন্তু খারাপ কিছু দেখালেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই আমরা যারা এ মাধ্যমে কাজ করি সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, সাময়িক লাভের জন্য যেনো সুদূর প্রসারী ক্ষতি করে না ফেলি।

সাক্ষাৎকার : রাজীব মণি দাস