মুক্তিযোদ্ধার আবদুল খালেক বীরবিক্রম স্বীকৃতি পাওয়ার ৩৫ দিনের মাথায় মৃত্যু!

`দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর খেতাব পাওয়া রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা বীর বিক্রম আবদুল খালেক আর নেই। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২৯ জুলাই) দিবাগত রাত ২টায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তার বাড়ি গোদাগাড়ীর চাপাল গ্রামে। করোনার উপসর্গ নিয়ে সোমবার (২৭ জুলাই) তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়নি।,

গত ৬ জুন নতুন প্রকাশিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে তার নাম উঠে। গেজেট বিভ্রাটের কারণে তার বীর বিক্রম স্বীকৃতি পেতে বিলম্ব হয়েছে।

আবদুল খালেকের বড় ছেলে মাসুম আক্তার জামান জানান, হাসপাতালে ভর্তি করার তিন-চার দিন থেকে তার বাবার জ্বর-কাশি দেখা দেয়। রবিবার রাতে তিনি মাথার যন্ত্রণায় খুব কাতরাচ্ছিলেন। তাই সোমবার সকাল ১০ টার দিকে তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তিনি মারা গেলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তার বাবার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

গেজেট বিভ্রাটের কারণে এতদিন বীর বিক্রম স্বীকৃতি পাননি আব্দুল খালেক। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত গেজেটে এক ধরণের ভুল ছিল, ২০০৪ সালের গেজেটে আরেক ধরণের ভুল। প্রথমবার লেখা হলো ‘এক্স নেভী’। পরের বার সেনাবাহিনী। তার অফিসিয়াল নম্বরের শেষে ১৯ এর জায়গায় ভুলবশত লেখা হয়েছিল ৯১, যা ছিল পাঞ্জাবি সৈন্যের।

২০১১ সালে জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঠিকানাবিহহীন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে তার বাবার নাম, নৌবাহিনীর পদবী ও সার্ভিস নম্বর দেওয়া ছিল। তার ভিত্তিতে তারা গেজেট সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন। সে আবেদন মন্ত্রণালয় থেকে হারিয়ে যায়। এভাবে অনেক ভোগান্তির পর গত বছর নতুন করে আবার আবেদন করেন। এরপর বীর বিক্রম স্বীকৃতি মেলে।

মুক্তিযুদ্ধকালে গোদাগাড়ীর খেতুর গ্রামে সিরাজুল চেয়ারম্যানের বাড়িতে ছিল পাকিস্তানি হায়েনাদের ঘাঁটি। ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেখানে গ্রেনেড হামলা করতে গিয়েছিলেন বীর সৈনিক আবদুল খালেক। কিন্তু গ্রেনেড ছোঁড়ার আগেই তিনি আহত হন। শত্রুবাহিনীর একটা গুলি তার বুক ভেদ করে চলে যায়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে সাত নম্বর সেক্টরের আরও বেশকিছু সম্মুখসমরে অংশ নেন তিনি।,