একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম আর নেই

একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম আর নেই। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত খ্যাতিমান আলোকচিত্রী সাইদা খানমের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

সাইদা খানমের জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় হলেও সাইদা খানমের জন্ম পাবনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। পরে ১৯৭২ সালে পুনরায় লাইব্রেরি সায়েন্সে স্নাতকোত্তর করেন। তাঁর বাবার নাম আবদুস সামাদ খান ও মায়ের নাম নাছিমা খাতুন। বেগম পত্রিকার মাধ্যমে সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর ছবি ছাপা হয় দৈনিক অবজারভার, মর্নিং নিউজ, ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায়। আলোকচিত্রী হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন তিনি। তিনি বাংলা একাডেমি ও ইউএনবির আজীবন সদস্য।

সাইদা খানম মাত্র ১৩-১৪ বয়সেই ছবি তোলার কাজটি শুরু করেন। পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) তিনিই ছিলেন একমাত্র ও প্রথম নারী আলোকচিত্রী।

সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে ‘বেগম’ পত্রিকার আলোকচিত্রী ১৯৫৬ সাল থেকে। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দুটো জাপানি পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর তোলা আলোকচিত্র মুদ্রিত হয়েছে।

অস্কারজয়ী সত্যজিৎ​ রায়ের ছবিও তোলেন সাইদা খানম। সত্যজিতের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। ওই বছরই জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন পুরস্কার পান তিনি। ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়। ১৯৬২ সালে ‘চিত্রালী’ পত্রিকার হয়ে একটি অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলে সমাদৃত হন সাইদা খানম।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী ঢাকার আজিমপুর এলাকায় অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণরত নারীদের ছবি তোলেন। ১৬ ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পাকিস্তানি সেনারা গোলাগুলি শুরু করে। খবর পেয়ে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেখানকার ছবি তুলতে যান তিনি।,