গভীর সমুদ্রে টুনা আহরণসহ ৭ প্রকল্পের অনুমোদন

গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্পসহ ৩ হাজার ৪৬৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) শেরেবাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ আহরণে প্রস্তাবিত ব্যয় ৬১ কোটি ৬ লাখ টাকা।  প্রকল্পের আওতায় দেশে মাছ উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়াতে কয়েকটি ভ্যাসেল কেনার পরিকল্পনা করছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্র থেকে বেশি পরিমাণে টুনা মাছ আহরণ করা যাবে।

চলতি মাস থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা ও সমজাতীয় মাছের প্রাপ্যতা যাচাই ও আহরণে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হবে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে অনাহরিত টুনা ও সমজাতীয় মাছ আহরণের মাধ্যমে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা এর লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হবে।

গভীর সমুদ্রে টুনা ধরতে তিনটি লং লাইনার প্রকৃতির ফিশিং ভ্যাসেল কেনা হবে। এছাড়াও ভ্যাসেল পরিচালনা করতে দেশি-বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মৎস্য আহরণ, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি, ক্রুসহ টুনা আহরণে নিয়োজিত ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ এবং ৩৭ জন দেশীয় ও সাতজন আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ করা হবে।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রায়তন মৎস্য সেক্টরের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণ প্রধানত সাগরের অগভীর অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রেই মৎস্য সংরক্ষণ আইন সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হয় না। এছাড়া আধুনিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের মাধ্যমে মৎস্য আহরণ চারটি ফিশিং গ্রাউন্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি উদ্যোগে নতুন ফিশিং গ্রাউন্ড চিহ্নিতকরণসহ আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক চাহিদাসম্পন্ন এবং মূল্যবান প্রজাতির টুনা মাছ আহরণে দক্ষতা অর্জন করতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে দ্রুত সম্পৃক্ত করা হবে। দেশে ও বিদেশে টুনা মাছের অনেক চাহিদা। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক অর্থ আয় করা সম্ভব।

এছাড়া একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ‘ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স’ প্রকল্পের। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শকের পকেটেই যাচ্ছে ২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৫৯৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের অনুদান থেকে ৫৯৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শক খাতে যাচ্ছে মোট ব্যয়ের ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- পূর্ত কাজের জন্য জনদিবসভিত্তিক শ্রমের ব্যবস্থা করা (বছরে জনপ্রতি ৯০ দিন)। ভূমি ক্ষয় রোধে ক্যাম্পের জমিতে দেশীয় ঘাস রোপণ ও সংরক্ষণ করা। এছাড়া ভূমিধস, বন্যা ও ভূমিক্ষয় রোধে ক্যাম্পের ঢালু জমির ঢাল রক্ষণাবেক্ষণ, পায়ে চলার পথে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা। পুনর্বাসন ও সংরক্ষণ, ক্যাম্প এলাকার পানি নিষ্কাশন, নারীদের জন্য শ্রমদিবসের ব্যবস্থা এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কাজসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।

এছাড়া ৮৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বারৈয়ারহাট-হোঁয়াকো রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ‘খুলনা সড়ক জোনের আওতাধীন বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ৫৩১ কোটি টাকা। ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন হতে পটুয়াখালী জেলাধীন বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা রক্ষা প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দাউদকান্দি-গোয়ালমারী মাসড়কের মান উন্নয়ন প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫৩০ কোটি টাকা। সাতটি প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২ হাজার ৬২৬ কোটি ৪৮ কোটি টাকা। বাকি অর্থ বিশ্বব্যাংকের ঋণ ও অনুদান থেকে মেটানো হবে।,