আইয়ুব আলী কাঠমিস্ত্রি বঙ্গবন্ধুর কফিন খুলেছিলেন সেদিন!

‘১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরেরদিন ঘাতকরা মরদেহ নিয়ে যায় তার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায়। সেই কফিন প্রথম খুলেছিলেন আইয়ুব আলী নামের এক কাঠমিস্ত্রি।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘‘৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে লালপাড়ের দানের কাপড় পরিয়ে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছিল জাতির পিতাকে।’’

ওইদিনটির বর্ণনা দিয়ে আইয়ুব আলী বলেন, ‘১৬ আগস্ট আনুমানিক বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মরদেহ কফিনে করে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে নিজ জন্মভূমি জেলা গোপালগঞ্জের গ্রামের বাড়ী টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে আসা হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় ৫-৭ জন লোক ডেকে তাদেরকে দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে বঙ্গবন্ধুর কফিন নামায়।’

‘‘তারপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়ীতে। কফিন খোলার জন্য ডাকা হয় আমাকে। কফিনের ভিতরে রক্তাক্ত সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরা জাতির জনকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২১টি বুলেটের চিহ্ন দেখে আঁতকে উঠেছিলাম আমিসহ উপস্থিত সবাই।’’

সেই ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও তার গা শিউরে উঠে জানিয়ে আইয়ুব আলী বলেন, ‘সেনাসদস্যরা গোসল না করিয়ে বঙ্গবন্ধুর দাফন কাজ খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে বলেছিল। কিন্ত ইমাম সাহেব তাতে রাজী না হওয়ায় সেনাসদস্যরা দাফনের জন্য আধাঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। তাদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছিল।’

দাফনে অংশ নেয়া এবং বঙ্গবন্ধুর মরদেহ গোসল করানো ইদ্রিস আলী কাজী ও কাঠমিস্ত্রি আইয়ুব আলীসহ আরও অনেকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর পাশের একটি পুকুর থেকে ভাঙ্গা বালতিতে করে পানি এনে ৫৭০ সাবান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গোসল করানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘‘এরপর রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে বঙ্গবন্ধুর দেয়া রিলিফের কাপড় দিয়ে দাফন সম্পন্ন করা হয়। সেদিন শেষবারের মত প্রিয় মানুষটিকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তার দুপাড়ে ও বাড়ীর চারপাশে ভিড় করেছিল শত শত মানুষ। কিন্ত দু:খজনক হলেও সত্য যে, সে সময়কার সেনাসদস্যরা তাদের প্রিয় মানুষটিকে এক পলক দেখতে দেয়নি। তবে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পেরেছিল কেবলমাত্র দাফনে অংশ নেয়া ২৫-৩০ জন মানুষ।’’

জানাজা শেষ করে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গোপালগঞ্জের সবুজ-শ্যামল গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় চির নিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করে ঘাতকরা।

সে সময় বিদেশ থাকায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।,