নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০ হয়েছে।

‘নারায়ণগঞ্জের তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডাক্তার পার্থ শঙ্কর পাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মোট ৩৭ জন রোগী ভর্তি করা হয়েছিল। বাকি যারা ভর্তি আছেন তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
মৃতদের মধ্যে ১৪ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলে রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের (১৮), সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), জুবায়ের (৭) ও রাশেদ (৩৪), বাহাউদ্দিন (৫৫) ও রাসেল (৩৪)। বাকি ৪ জনের নাম এখনও জানা যায়নি।

মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ বারিক শনিবার বিকাল ৬টায় সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে, তাদের ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এর আগে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম হোসেন খান জানান, স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শনাক্তের পর বিনা ময়নাতদন্তে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১৪ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস একটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি ও জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপস) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমানকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনও।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণে আহতদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একই সঙ্গে তিনি রোগীদের সব রকম সুবিধা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক, পরিচালক ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি। তাদের বলেছি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের চিকিৎসার মধ্যে সর্বোচ্চ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের দেখতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক রোগীকে দেখেছি। তাদের যে অবস্থা আমরা এমনটা বলতে পারবো না যে তারা প্রত্যেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। তবে এইটুকু আমরা বলতে পারি আমাদের বাংলাদেশে যতটুকু চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে এই উন্নত হাসপাতালে তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা কাজ করছে। আমরা যতটুকু শুনেছি তারা ঘটনার সূত্রপাত আইডেন্টিফাই করেছে এবং গ্যাস পাইপের লিক কোনও জায়গা থেকে বের হয়েছে তাও জানা গেছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর জানা যাবে কেন এ ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে শুনেছি তদন্ত অব্যাহত আছে, আশা করি দ্রুতই আপনারা জানতে পারবেন।’,