বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মহুতির দিনে তার উপর নির্মিতব্য চলচ্চিত্রটির মহরত

‘ভারতের মুক্তিসংগ্রামে প্রীতিলতা অগ্নিযুগের প্রথম নারী শহীদ। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সফলভাবে সে দায়িত্ব পালন করেন। এদিন রাত ১২টা অতিক্রম হয়ে ঘড়ির কাঁটা ২৪ সেপ্টেম্বরে প্রবেশ করার অল্প কিছুক্ষণ পরেই আত্মাহুতি দিয়ে অমরত্ব লাভ করেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে।

বিপ্লবী এই নারীর আত্মহুতির দিনেই তার উপর নির্মিতব্য সিনেমার মহরত আয়োজন করেছেন নির্মাতা প্রদীপ ঘোষ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানান তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর মিলনায়তনে (৩য় তলা, নতুন ভবন, ১১২ সার্কিট হাউজ রোড, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০) আয়োজিত হবে ছবির মহরত।

বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮৮তম আত্মাহুতি দিবস। এদিন তার উপর নির্মিতব্য চলচ্চিত্রটির মহরত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এম.পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। আয়োজনে সভাপতিত্ব করবেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের যে বিস্ময়কর ও সাহসিকতাপূর্ণ অভ্যুত্থান ঘটেছিলো সেই ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত হচ্ছে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে সরকারি অনুদান পায় ছবিটি। এর প্রযোজনা ও পরিচালনা করছেন প্রদীপ ঘোষ।

ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো। সারা ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্নকে আন্দোলিত করেছিলো চট্টগ্রামের যুববিদ্রোহ। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সাহসিকতাপূর্ণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম চার দিন স্বাধীন ছিলো। দুইশত বছরের বৃটিশ শাসন-শোষণের ও পরাধীনতার শৃংঙ্খল মোচনে, বীর চট্টলার মাটিতে জন্ম নেয় বীর নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। যিনি বৃটিশ প্রমোদ কেন্দ্র ইউরোপিয়ান ক্লাব সফলভাবে হামলা করেন। প্রীতিলতার আত্মাহুতির বীরচিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিশদ বিবরণ নিয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’। উপন্যাসটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হবার পর পাঠক জানতে পারে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের অনেক অজানা কাহিনী। গল্পে রয়েছে প্রীতিলতার কিশোরী জীবনের সহজ সরল ছেলেবেলা। কলকাতায় বেথুন কলেজে অধ্যায়নকালে বীরকন্যা প্রীতিলতার চেতনায় অংকুরিত হয় স্বদেশ মুক্তির ব্রত। চট্টগ্রাম কলেজের মেধাবী ছাত্র রামকৃষ্ণ বিশ্বাস হত্যা মামলার আসামী হয়ে আলিপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। হাইকোর্টে ফাঁসির রায় ঘোষণার পরে পত্রিকায় তা ছাপা হয়। প্রীতিলতা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসকে একবার দেখার জন্য উদ্যোগী হন। তার এক আত্মীয়ার মাধ্যমে জেলারের কাছে আবেদন করে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের বোন পরিচয়ে।

অমিতা দাস ছদ্ম নামে প্রীতিলতা চল্লিশবার জেলে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের কাছে যায় এবং এক সময় তাদের এ পরিচয় প্রণয়ের দিকে এগিয়ে যায়। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসি হবার পরে আহত হৃদয় নিয়ে প্রীতিলতা চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথে সাক্ষাৎ করে সরাসরি সশস্ত্র লড়াইয়ে যোগ দেয়। পলাতক জীবনে মাস্টারদা তাকে ইউরোপিয়ান ক্লাব হামলার দায়িত্ব প্রদান করেন। হামলায় প্রীতিলতা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। গ্রেপ্তার এড়াতে সায়ানাইড গ্রহণ করে জীবন বিসর্জন দেন।

ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ নিয়ে নির্মিতব্য এই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্রে অভিনয়ে অংশ নিচ্ছেন দেশের খ্যাতিমান অভিনয় শিল্পীরা। মহরত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অভিনয় শিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। চলচ্চিত্রের পোষাক পরিকল্পনায় রয়েছেন শিল্পী কনক আদিত্য। সংগীত পরিচালনা করছেন খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী বাপ্পা মজুমদার।,