ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কক্সবাজারের পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি : ডিআইজি আনোয়ার

‘সামগ্রিকভাবে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সেখানকার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত মোট এক হাজার ৪৮৭ জনকে বদলি করা হবে। আজ শুক্রবার পর্যন্ত এই বদলির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪৭ জনে। বদলি শেষে কিছু শূন্যপদ পূরণসহ মোট এক হাজার ৫০৭ জন পুলিশ সদস্যকে কক্সবাজার জেলা পুলিশে যুক্ত করা হবে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের নবনিযুক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন চাই। কক্সবাজারের পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ুক। সেজন্য কক্সবাজারের পুলিশকে আমরা ঢেলে সাজাতে চাই।’

এত দিন কি তাহলে পরিবেশটা নেতিবাচক ছিল-জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এত দিন পুরো পরিবেশটা নেতিবাচক ছিল না, তবে কিছু সংকট ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে চাই। এত দিন মানুষের অভিযোগ ছিল, কিছু পুলিশ সদস্য ঘুরে ফিরে কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করছেন। ওই অভিযোগটি আমলে নিয়ে আমরা কক্সবাজারে মোট এক হাজার ৪৮৭ জনকে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বদলি শেষে কিছু শূন্যপদ নিয়োগসহ মোট এক হাজার ৫০৭ জন পুলিশকে যুক্ত করা হবে কক্সবাজারে।’

ঘুরে ফিরে কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনের কারণে কিছু পুলিশ সদস্য মাদকের সিন্ডিকেট মেইনটেইন করেন কি না জানতে চাইলে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এত বিশাল সংখ্যক পুলিশকে বদলি করা হচ্ছে। তার মানে দাঁড়াল, এখন কক্সবাজারে যারা ইতোমধ্যে যোগদান করেছেন বা করবেন তারা কিন্তু সবাই নতুন। সিন্ডিকেট মেইনটেইনের কথা যদি বলেন, সেক্ষেত্রে নতুনরা তো সিন্ডিকেটে জড়িত না। সুতরাং নতুনদের পুলিশের পক্ষ থেকে সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হবে। যাতে তারা মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। মাদকের কোনো সিন্ডিকেট থাকলে আমরা তা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। কক্সবাজারে নতুন করে কোনো অবৈধ সিন্ডিকেট যাতে দাঁড়াতে না পারে আমরা সেই চেষ্টাই করব।’

কক্সবাজার জেলার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে গত ৮ সেপ্টেম্বর মতবিনিময় করেন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

‘আমরা কক্সবাজারে নতুন করে শুরু করতে চাই। যেভাবে হয়েছে, যা হয়েছে, ওই ঘটনাটার (মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড) কথা যদি আমরা বলি, মামলা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। একটি তদন্ত কমিটি রিপোর্টও দিয়েছে। সুতরাং ওই দিকে আমি আর যেতে চাই না। আমি সামনের দিকে তাকাচ্ছি। আগামী দিনগুলোর জন্য আমরা কক্সবাজারকে একেবারেই নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছি। একই সঙ্গে কক্সবাজার নানা দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সুতরাং আমাদের সবার মধ্যে একটা সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন এবং আছে। আমরা যেন কক্সবাজারের সব মানুষের নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করতে পারি, সেই চেষ্টা করে যাব।’ বলছিলেন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও কক্সবাজার পুলিশের কয়েকটি সূত্র এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের পুরো সেটআপ পরিবর্তন করে পুলিশের সুনাম ফিরিয়ে আনতে যা যা করার দরকার সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোডে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর পুলিশের ভাবমূর্তির সংকট দেখা যায়। ওই ঘটনায় সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ারের করা হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য জেলহাজতে রয়েছেন।

এ ছাড়া নানাস্থান থেকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে শুরু করে। অথচ, করোনাভাইরাসের শুরু থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল পুলিশ সদস্যরা। তখন সবাই তাদের প্রশংসা করে। এখন কক্সবাজারে হারানো সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ ছাড়া কক্সবাজারে ইয়াবা বা মাদক সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে জনবল ঢেলে সাজানোর  সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, আজ শুক্রবার পর্যন্ত বদলির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪৭ জনে। এর মধ্যে রয়েছেন পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আটজন শীর্ষ কর্মকর্তা, আট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ৩৪ পরিদর্শক, ১৫৮ জন এসআই, ৯২ জন এএসআই, এক হাজার ৫৫ জন নায়েক ও কনস্টেবল। সবাইকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাইরে ভিন্ন রেঞ্জ ও বিভাগে বদলি করা হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে গত ৮ সেপ্টেম্বর মতবিনিময় করেন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বদলি হওয়া শূন্য পদ পূরণে আজ চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যোগ দেন কক্সবাজারের আট থানার ওসিসহ ৩৭ জন পুলিশ পরিদর্শক, ৮৫ জন এসআই-এএসআই ও ৭৩৪ জন কনস্টেবল। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশে সম্পূর্ণ নতুন জনবল যোগ দেবে।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেনকে রাজশাহীর এসপি হিসেবে বদলি করা হয়। আর ঝিনাইদহের এসপি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নবাগত এসপি গত বুধবার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এসপি মাসুদ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফুলসজ্জিত গাড়িতে করে কক্সবাজার থেকে বিদায় গ্রহণ করেন।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুককে রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ও গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেনকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি পদে বদলি করা হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম রেঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ার হোসেন। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর তিনি কক্সবাজার জেলার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

সেদিন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন কক্সবাজারের পুলিশ সদস্যদের পেশাদারত্বের সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে বলেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এবং অন্য পেশার সবার প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে সম্মান  করতে হবে। কাজকর্মে চরম উৎকর্ষ ও সর্বোত্তম দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে।

এরপর ৯ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থানার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কাল ডিআইজি বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এলাকায় শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। থানা হবে সব শান্তিপ্রিয় মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে থানা এলাকা অপরাধমুক্ত করতে হবে।,