ক্ষুধামুক্ত জীবনযাপনের জন্য বিভিন্ন দেশের দাতাদের সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে : ডব্লিউএফপি

‘কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগেই জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান ডেভিড বিসলি বিশ্বনেতাদের সতর্ক করেছিলেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ২০২০ সালে বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। ডব্লিউএফপির প্রধান বলেছিলেন, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, আফ্রিকায় পঙ্গপালের হানা, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং লেবানন, কঙ্গো, সুদান, ইথিওপিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকট এ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

সূত্র :

এরপরই কোভিড-১৯ মহামারিতে পরিণত হয়, যা দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় খাদ্য সংকট আরো তীব্র হয়। এটি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সংবাদ সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।

ডেভিড বিসলি বলেন, ‘ডব্লিউএফপি এবং এর সহযোগীরা এ বছর ১৩৮ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, যা আমাদের ইতিহাসে বৃহত্তম অগ্রগতি।’

বিভিন্ন দেশের সরকার, সংস্থা এবং দাতাদের সহায়তা করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিশ্বের দুই হাজারের বেশি বিলিয়নেয়ারকে, যাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ আট ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, এ ক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়াতে বিশেষ আবেদন জানিয়েছেন ডব্লিউএফপির প্রধান।

ডব্লিউএফপির ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বিসলি বলেন, ‘বিশ্বের ৬৯ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের প্রত্যেকেরই আজ শান্তিপূর্ণভাবে এবং ক্ষুধামুক্ত জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অর্থনৈতিক চাপ ক্ষুধার্তদের দুর্দশা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। আর এখন বিশ্বব্যাপী মহামারির ভয়াবহ প্রভাব আরো লাখ লাখ মানুষকে অনাহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

এর আগে গত এপ্রিলে বিসলি বলেছিলেন, ‘যদিও খাদ্য সংকট মূলত দ্বন্দ্বের ফলাফল, তবে কোভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরো বেড়েছে।’

এরপর গত মাসে নিরাপত্তা পরিষদকে বিসলি বলেন, ‘উদার অনুদানের কারণে দুর্ভিক্ষ রোধ করা গেছে, তবে এ লড়াই থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে। অনাহারের দিকে ধাবিত হওয়া ২৭ কোটি মানুষের আজ আমাদের সহায়তা আগের চেয়ে আরো বেশি প্রয়োজন।’

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান আরো বলেন, ‘খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য তিন কোটি মানুষ নির্ভর করে থাকে একমাত্র ডব্লিউএফপির ওপর, যেটি ছাড়া তাঁরা মারা যাবেন এবং এক বছর তাঁদের খাওয়ানোর জন্য ডব্লিউএফপির প্রয়োজন ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এ সংকট মোকাবিলায় যা যা সম্ভব, তার সবই আমরা করছি। তবে প্রয়োজনীয় সহায়তা না পেলে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের এক বিশাল ঢেউ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এবং এটি হলে বহু বছর ধরে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার ভেতরে থাকা জাতিগুলো আরো সংকটে নিমজ্জিত হবে।’

বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টার জন্য ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে ডব্লিউএফপি। গতকাল শুক্রবার নরওয়ের অসলো থেকে এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন নোবেল কমিটির সভাপতি বেরিত রেইস-অ্যান্ডারসন।

মহামারি করোনার মধ্যেও ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই, শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ-সংঘাতকবলিত এলাকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং যুদ্ধ ও সংঘাতের অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার রোধ করতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করার জন্য ক্ষুধার বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াই প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ডব্লিউএফপিকে এবার শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি।,