গৃহহীনদের স্বপ্ন হলো সত্যি

দোচালা কুঁড়ে ঘরে কিংবা পরের জায়গার বারান্দায় শুয়ে নিজের একটি ঘরের স্বপ্ন দেখাই যায়। কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাই নেই তাদের সে স্বপ্ন সত্যি কী আদৌ হয়? হয়েছে!  দক্ষিণবঙ্গের গৃহহীন-ভূমিহীনরা নিজের ঘরের মুখ দেখা শুরু করেছে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) দক্ষিণবঙ্গসহ সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীনকে সেমি-পাকা ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এই ঘরগুলো তাদের দেওয়া হয়। মুজিববর্ষে এই ঘরগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।

“আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার”—এই স্লোগান নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার জন্য জমি ও গৃহ প্রদান করার উদ্যোগ নেয় সরকার। বিগত ৩ দিন দক্ষিণবঙ্গের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ঘুরে দেখা গেছে গৃহহীনদের মধ্যে ঈদের মতো আনন্দ। নতুন ঘর নিয়ে নতুন করে আবারও স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন তারা। ২ শতাংশ জমির মালিকানা এবং দুই বেডরুমের বাড়িতে পুরনো সংসার আবার প্রাণ পেতে যাচ্ছে নতুনের মতো।

আশ্রয়ণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়,  ‘দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’– প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১ এবং  জমি আছে কিন্তু ঘর নাই, এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে দুই শতক সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানসহ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সেমি-পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২১ জেলার ৩৬ উপজেলার ৪৪টি প্রকল্পে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

খুলনা

মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘরসহ জমি প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সারাদেশের মতো খুলনার নয়টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৯২২টি পরিবারকে ঘরসহ জমি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডুমুরিয়া উপজেলায় সংযুক্ত হয়ে শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ডুমুরিয়ায় একসঙ্গে ৬২টি ঘর তৈরি করা হয়েছে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামে একসঙ্গে তৈরি করা হয়েছে ৬৪টি ঘর। এদিন প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত হওয়া অবস্থায় জেলা প্রশাসন গৃহহীনদের হাতে তুলে দেন বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র। অনুষ্ঠানে উপকারভোগী হতদরিদ্র শারমিন প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি না দিলে আমি কোনওদিন ঘর করতে পারতাম না। আপনি এভাবে আমাদের মাঝে অনেকদিন বেঁচে থাকুন। আল্লাহ যেন এভাবেই আপনার মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করেন।’