আজ পহেলা বৈশাখ

আজ বুধবার পহেলা বৈশাখ। এ দিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই বাঙালির জীবনে আরেকটি বছরের নবযাত্রা শুরু হবে। বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের ১৪২৮ সালের প্রথমদিন। সুপ্রাচীনকাল থেকেই যেদিনটি বাঙালির জাতির কাছে চিরন্তন এবং সর্বজনীন এক উৎসবের নাম। মধুর আনন্দময় আর মহামিলনের একটি দিন। মানব জাতিকে সম্প্রতির বন্ধনে আবদ্ধ করার বিশাল এক উপলক্ষ।

আমরা জানি, বাংলা বছরের শুরুর এই দিন শুধু বাঙালি নয়, অন্য জনজাতির মানুষের কাছেও এখন তা নবজীবনের আহ্বানে পরিণত হয়েছে। বাঙালি জাতির মতো তাদের কাছেও চির নতুনের বার্তা নিয়ে বেজে উঠে সেই আগমনী সুর। যে সুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গেয়েছেন,
‘‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো,
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।”

মূলত এই গানেই বাংলা নববর্ষকে আহ্বান জানানো বাঙালির কাছে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তাই নববর্ষ মানেই সব অশুভ আর অসুন্দরকে পরাজিত করে শুভ ও সুন্দরের আহ্বান। অথচ ইতিহাস বলে, মোঘল আমলে ফসলের বছর হিসাব করতে এই বর্ষগণনার শুরু হয়েছিল। তবে কালের পরিক্রমায় আজ তা বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশের বিরাট এক উপলক্ষ।

পহেলা বৈশাখের বড় এক অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। গত কয়েক যুগ ধরেই তা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মতো এই বছরেও হচ্ছে না মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেই ঘোষণাও আগেই দিয়েছে শোভাযাত্রার আয়োজনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বাইরে কোন অনুষ্ঠান করতে না পারলেও ঘরের মধ্যে নিরাপদ অবস্থানে থেকে বাঙালি উদযাপন করবে দিনটিকে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বরণ করে নেবে নববর্ষকে।

বুধবার যে মুহূর্তে নতুন সূর্য আনবে নববর্ষের বারতা, ঠিক সেই সময় করোনাভাইরাস ঠেকাতে সারাদেশে শুরু হবে ৮ দিনের ‘কঠোর লকডাউন’। এরই মধ্যে সরকার সেই লকডাউন বাস্তবায়ন করতে বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে। বিশেষ করে মানুষকে ঘরে রাখতেই এমন উদ্যোগ। তাতে মানুষের জীবিকায় ধাক্কা খেলেও জীবনের আলো জ্বলবে- সেটাই সবার প্রত্যাশা।

আমরা জানি, পৃথিবীর অন্য সব জাতির মতো বাঙালিও লড়াই করছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্যবিধি আর সামাজিক দূরত্ব রেখে আসুন আমরাও নববর্ষে শপথ নেই বিশ্বকে থমকে দেওয়া সেই ভাইরাসকে পরাজিত করার। একসাথে গেয়ে উঠি নব জীবনের জয় গান।