গান-কবিতায় শাহবাগে ছাত্র সংগঠনের ধর্ষণের প্রতিবাদ

‘সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করেছে বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’। সমাবেশ থেকে বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়। সমাবেশে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও ‘সেভ আওয়ার উইমেন, বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও যোগ দেয়।

সমাবেশ থেকে নয় দফা দাবির পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান করা, ১১ অক্টোবর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ১২ অক্টোবর ধর্ষণবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১৩ অক্টোবর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ১৪ অক্টোবর নারী সমাবেশ ও ১৫ অক্টোবর নারীদের সাইকেল শোভাযাত্রা।

এসব দাবি মানা না হলে ১৬ ও ১৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত লং মার্চ করার ঘোষণা দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে।

সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেকে এসে যোগ দেয়। বিক্ষোভকারীরা- ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘ধর্ষকের আস্তানায়, আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’, ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’- ইত্যাদি স্লোগান দেয়। প্রতিবাদী গান, আবৃত্তি ও নাটকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীন একটি রাষ্ট্রে ধর্ষণের বিচার চাওয়াটা লজ্জাজনক। ধর্ষকরা এ সমাজের কীট এবং ধর্ষণ বর্তমানে বাংলাদেশের মূল ব্যাধি। প্রতিদিন নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আমরা ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ চাই। আমরা চাই, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বুক থেকে ধর্ষণ নামের শব্দটি চিরতরে বিদায় হোক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘পুরো রাষ্ট্রই প্রতিমুহূর্তে ধর্ষিত হচ্ছে। কেননা এ রাষ্ট্র অন্যায্যতার মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন উপায় ও কায়দায় অন্যায্য ব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্র ধর্ষিত হচ্ছে। পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা সংগঠিত ভণ্ডামির শিকার হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা এরই উদাহরণ। এই অন্যায্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা দূর করতে হলে ধর্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।’

অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান আরো বলেন, ‘ক্ষমতার সঙ্গে ধর্ষকের সম্পর্ক না থাকলে তারা এত দুর্বিনীত হয়ে উঠত না। এদের মদদ দিচ্ছে বড় বড় নেতা। যারা ধর্ষকদের পাহারাদার তাদের বিরুদ্ধেও একত্রিত হতে হবে।’

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স নয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করা, সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা ও  নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন প্রত্যাহার করা; ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, সাহিত্য-নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করা, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকারী ভূমিকা নেওয়া ও সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা; গ্রামীণ শালিসের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা ইত্যাদি।,