কিছু অঙ্গরাজ্যের ফলাফলে ঝুলে আছে ট্রাম্প-বাইডেনের ভাগ্য

বহুল কাঙ্ক্ষিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে চলছে ভোট গণনা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফলাফলে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই। কিছু অঙ্গরাজ্যের ফলাফলে ঝুলে আছে তাদের নির্বাচনী ভাগ্য।

৪১টি রাজ্যের ফলাফল পাওয়া গেছে। ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে জো বাইডেন পেয়েছেন ২২৭টি। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৩টি।  সর্বশেষ ফলাফলে জো বাইডেন এগিয়ে আছেন। তবে সুইং রাজ্যগুলো নিয়ে চলছে লড়াই। যে রাজ্যগুলো যেকোনো মুহুর্তে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তার ওপর আছে ১০ কোটির বেশি ডাকযোগে ভোট। যা গণনা করার সময় সাপেক্ষ।

কে হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট, তা এখনও অনিশ্চিত।  বিজয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। সেই হিসাবে বাইডেনকে পেতে হবে আরো ৪৩টি আসন। আর ট্রাম্পকে পেতে হবে ৫৭টি।

এমন অবস্থায় ফল ঘোষণার বাকি ৯টি গুরুত্বপূর্ণ ৬টি অঙ্গরাজ্য। এগুলো হলো- উইসকনসিন, অ্যারিজোনা, মিশিগান, পেনসিলভ্যানিয়া, নাভাদা, আলাস্কা, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়া।

এর মধ্যে উইসকনসিনে জো বাইডেন এগিয়ে আছেন সামান্য ভোটের ব্যবধানে। সেখানে বাইডেন পেয়েছেন শতকরা ৪৯.৪ ভাগ ভোট। ট্রাম্প পেয়েছেন শতকরা ৪৯.১ ভাগ ভোট। এ রাজ্যে মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ১০টি।

ঐতিহ্যগতভাবে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য রিপাবলিকানদের থাকলেও এ বছর ব্যাটেলগ্রাউন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।  এখন পর্যন্ত যে ভোট গণনা করা হয়েছে তাতে বাইডেন ৮৩% পেয়েছে। ফলে ধারণা করছে এ অঙ্গরাজ্যে বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

নর্থ ক্যারোলিনায় জো বাইডেন ভোট পেয়েছেন শতকরা ৪৮.৭ ভাগ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫০.১ ভাগ। এখানে আছে ১৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট।

রিপাবলিকানদের ঘাটি হিসেবে পরিচিত জর্জিয়াতে বাইডেন পেয়েছেন ৪৮.৩ ভাগ ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫০.৫ ভাগ। এখানে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে ১৬টি। তবে আটলান্টায় এখনো ভোট গণনা শেষ হয়নি।

নাভাদা অঙ্গরাজ্যে দুইজনই আছেন তুমুল লড়াইয়ে।  তবে ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন বাইডেন।

মিশিগানে এখনো দুইজনের অবস্থান প্রায় সমানে সমান। তবে ডেমোক্রেটদের অঞ্চলে ডেট্রোয়েটের মতো এলাকাগুলোতে এখনো গণনা শেষ হয়নি।

পেনসিলভ্যানিয়া অঙ্গরাজ্যে মোট ২০ টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে।  যতগুলো অঙ্গরাজ্যে বাকি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পেনসিলভ্যানিয়া অঙ্গরাজ্যে।  এখানে ট্রাম্প বাইডেনের চেয়ে ব্যাপকভাবে এগিয়ে আছেন।  তবে এখানকার মেইলের ব্যালোট গণনা শুক্রবারের আগে শেষ হবে না বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এ রাজ্যগুলোতে এখন চলছে মেইলে দেয়া এবং আগাম দেয়া ভোটগুলোর গণনা। নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম খবর দিচ্ছিল- যারা আগাম ভোট বা মেইলে ভোট দিয়েছেন তার মধ্যে বেশির ভাগই ডেমোক্রেট সমর্থক।

যেদিন প্রকাশ হতে পারে ঝুলে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোর ফলাফল:

উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও মিশিগান মিলিয়ে মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে ৫৭টি। বাইডেনের জয়ের জন্য এতো ভোট প্রয়োজন নেই। তার আর মাত্র ৪৬টি ভোট হলেই চলে।

এমন অবস্থায় ‘জালিয়াতির’ অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব রাজ্যে লাখ লাখ ভোট গণনা বাকি থাকতেই তিনি নিজের বিজয় ঘোষণাও দিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি ‘বড় বিজয়’ ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন। এ বিষয়ে তার একটি বিবৃতি দেয়ার কথাও রয়েছে।

আর ট্রাম্পের বিজয় ঘোষণা ও ভোট কারচুপির অভিযোগের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ডেমোক্র্যাট শিবির।

তারা বলছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বিব্রতকর, অভূতপূর্ব ও মিথ্যাচার। এর নিন্দা জানাই। এটি আমেরিকার নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার নগ্ন প্রচেষ্টা।

আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারী নিয়ে জো বাইডেনও সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট গণনা বন্ধ চেষ্টায় আদালতে গেলে আমার আইনজীবীরা প্রস্তুত তা মোকাবেলার জন্য।

বিবিসি বলছে, তার অর্থ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হতে পারে আদালত কর্তৃক।  সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় গড়িয়ে যেতে পারে ফলাফল পেতে।  এতো সহজেই জানা যাচ্ছে না কে হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন যে, ডাকযোগে প্রত্যাশিত ভোটের বেশি ভোট পড়ায় চলতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পেতে কয়েকদিন, এমনকি সপ্তাহও অপেক্ষা করতে হতে পারে।

এর আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো ২০০০ সালে। জর্জ ডব্লিউ বুশ এক মাস পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন সেবার।