ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে রাজধানীর ব্যস্ত একটি সড়ক থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইন অনুসারে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানার শাস্তিও দেয়া হয় অভিযুক্তকে। অনাদায়ে আরো ৬ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাকে।

তিনি জানান, আসামীর বিরুদ্ধে যে আইন অনুসারে চার্জ গঠন করা হয়েছে, সেই ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

আসামী মজনুর পক্ষের আইনজীবী রবিউল ইসলাম রবির – যাকে আসামীকে আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল – মতে আসামী ন্যায়বিচার পাননি এবং চাইলে উচ্চ আদালতে অ্যাপিল করতে পারবেন।

এজলাসে নিয়ে যাওয়ার সময় আসামী মজনু চিৎকার চেঁচামেচি ও উগ্র ব্যবহার করেন বলে জানান বাদী পক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “এজলাসে নিয়ে আসার সময় অনেক মানুষ, সাংবাদিক, ক্যামেরা দেখে মজনু কিছুটা অপ্রকৃতস্থ ও উগ্র আচরণ করা শুরু করে। পরে এজলাসেও একই আচরণ চালিয়ে যায় সে।”

পরে মজনুকে শান্ত করার জন্য এজলাস কক্ষ থেকে অধিকাংশ মানুষকে বের করে দিয়ে রায় পড়ে শোনান আদালত।

মজনুর পক্ষের রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান মজনু বিচার চলাকালীন সময়েও আদালতে উগ্র আচরণ করেছিল।

তিনি বলেন, “আমার চেষ্টা ছিল আসামীকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করা। কিন্তু মজনু আদালতে বিচার চলাকালে, স্বাক্ষী জেরা করতে গিয়ে এমন কিছু আচরণ করেছে, যা তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দিকে আরো বেশি করে ঠেলে দিয়েছে।”

কী ঘটেছিল?

৫ই জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যে সাতটার সময় ওই ছাত্রীকে ব্যস্ত রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।

নির্যাতিত ছাত্রী বিবিসিকে বলেছিলেন, রবিবার সন্ধ্যায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল একসাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া।

ছাত্রী ধর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বেশ কয়েকদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন

সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা এলাকায় বাস থেকে নামেন।

সেখান থেকেই অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।

ঘটনার আকস্মিকতায় সেখানেই জ্ঞান হারান ছাত্রীটি।

নির্যাতনের এক পর্যায়ে জ্ঞান ফিরে পান তিনি এবং আবার জ্ঞান হারান।

রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফেরে তার এবং তিনি তার বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করে হাসপাতালে পৌঁছান।

ঐ ছাত্রীটির ধর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত ধর্ষকের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলকায় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার তিনদিন পর বুধবার ভোররাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করে র‍্যাব।

অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর র‍্যাব জানায়, ধর্ষণকারী হিসেবে সন্দেহভাজন ঐ ব্যক্তিকে আটকের পর ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোনে তার ছবি পাঠিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

ঐ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি এবং শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।