ম্যারাডোনার মতো ঝলক দেখায়নি কেউ

ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা আর নেই। তার প্রয়াণে সারা বিশ্বের ভক্তরা এখন শোকে মুহ্যমান। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ৮০’র দশকে মাঠ কাঁপানো এই কিংবদন্তি ফুটবলারের স্মৃতি রোমান্থন করছেন সবাই। বাংলাদেশের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার ও বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীও তাকে স্মরণ করলেন। তার দৃষ্টিতে ম্যারাডোনা ফুটবলের রাজা।

কোটি ভক্তের মতো ম্যারাডোনার মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে বাফুফের এই কর্মকর্তারও, ‘তিনি ম্যারাডোনা নন, তিনি একজন রাজা। যিনি কোটি কোটি মানুষের মনে গেঁথে আছেন আবেগ আর ভালোবাসা নিয়ে। ফুটবলের এমন এক রাজা মাত্র ৬০ বছরেই বিদায় নিবেন-তা কি কেউ ভেবেছে! তার মৃত্যুর খবরটি যেমন আমার কাছে বড় দাগ কেটেছে, তেমনি বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল প্রেমীকে করেছে হতভম্ব।’

আব্দুস সালাম মুর্শেদী মনে করেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর একজনই, ‘আমি মনে করি, ডিয়েগো ম্যারাডোনার মতো কেউ কখনো আসেননি। কখনো আসবেন, সে আশা করাটাও হয়ত ভুল। যুগে যুগেই অসংখ্য ফুটবলার এসেছেন, যাদের প্রতিভার ঝলক ছিল। তবে ম্যারাডোনার মতো ঝলক কেউ দেখায়নি। প্রকৃতি তাকে দেওয়ার সময় অকৃপণ হাতেই দিয়েছে।’

ম্যারাডোনার কারণে ফুটবল আরও জনপ্রিয় হয়েছে। বাফুফের এই কর্তাও মনে করেন তেমনটা, ‘আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ম্যারাডোনা থেকে বাংলাদেশ কী পেয়েছে? আমি বলবো, ফুটবল মানেই এ দেশের মানুষ এক সময় চিনতেন ম্যারাডোনাকে। আর তাইতো যখন বিশ্ব আসর জমে ফুটবলের, তখন গোটা দেশেই এক টুকরো আর্জেন্টিনা ফুটে উঠে আসে আমাদের মাঝে।’

ফুটবল সম্রাট পেলের উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, ‘ফুটবল সম্রাট পেলের খেলা টেলিভিশনে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য এ দেশের ক’জন মানুষের হয়েছে আমার জানা নেই। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০’র পেলে ব্রাজিলের হয়ে যে তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন, বাংলাদেশের ক’জন মানুষেরই বা তা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে? সেদিক থেকে ফুটবলের কোনো মহানায়কের খেলা সরাসরি টেলিভিশনে দেখার অভিজ্ঞতা এ দেশের মানুষের হয়েছে ম্যারাডোনাকে দিয়েই। ফুটবলের প্রতি গভীর ভালোবাসাটা সেখান থেকেই আসার কথা।’

এ সময় ম্যারাডোনার প্রশংসাও ঝরেছে তার কণ্ঠে, ‘ম্যারাডোনা ফুটবল অঙ্গনে নিজেকে বৈশ্বিক তারকা হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন মূলত ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। জাদুকরী ফুটবলের মায়ায় সেবার তিনি ফুটবল বিশ্বকে করেছিলেন মন্ত্রমুগ্ধ। ফুটবলের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের বসবাস সেই অনাদিকাল থেকে। একজন ফুটবলার কীভাবে একা কোনো দলকে বিশ্বকাপের মতো একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে টেনে নিতে পারেন, সেই উদাহরণও তো প্রথম ম্যারাডোনাকে দিয়েই দেখেছে ফুটবল বিশ্ব।’

আরও যোগ করে বলেছেন, ‘বাতিস্তা, দানিয়েল পাসারেলা, লুইস বুরোচাগা, ভালদানোর মতো খেলোয়াড়ও আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ দলে ছিলেন। কিন্তু এটা তো সবারই জানা আর্জেন্টিনা সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ম্যারাডোনা নামের অতিমানবীয় এক ফুটবলারের নৈপুণ্যে! সেই বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাকে নিয়ে কত স্মৃতিই না ভেসে ওঠে মানুষের মনে। জাদুকরী সেই ম্যারাডোনা পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালেও খেলেছেন অসাধারণ ফুটবল। আর সবশেষে ৮৬’র বিশ্বকাপ জয়ের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার দৃশ্যটিও ছিল মোহনীয়। যে দৃশ্য এখনো চোখে লেগে আছে বিশ্বজোড়া ফুটবলপ্রেমীদের।’

বাংলাদেশের মানুষ আজ যেমন ফুটবলের এই কিংবদন্তিকে হারিয়ে হতবাক, তেমনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও শোকাহত। অনেক আক্ষেপ করে সালাম মুর্শেদী বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিতে এই মুজিব বর্ষে ফুটবল নিয়ে আমাদের অনেক বড় বড় পরিকল্পনা ছিল। ম্যারাডোনাকেও দূত হিসেবে বাংলাদেশে নিয়ে আসার কথা হচ্ছিল। আজ থেকে সেই পরিকল্পনা শুধু কল্পনাতেই রয়ে যাবে। আমি প্রত্যাশা করবো, ম্যারাডোনার অনুপ্রেরণা নিয়ে বিশ্বের মাঝে ফুটবল টিকে থাকুক যুগে যুগে।’