ঢাকায় ভাস্কর্য বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ছত্রভঙ্গ করলো পুলিশ

ভাস্কর্য তৈরিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বের হওয়া একটি মিছিল পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।

বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আকবর হোসেন ঘটনাস্থল থেকে জানাচ্ছেন, শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম থেকে কয়েকশ মানুষ ভাস্কর্য বিরোধী মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলটি পল্টন এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ সেটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

কয়েকটি ইসলামপন্থী সংগঠন এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে পল্টন, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীরা বের হওয়ার চেষ্টা করলে শুরুতে কিছুক্ষণ তাদের বের হতে বাধা দেয় পুলিশ।

তখন মসজিদ চত্বরে এবং মসজিদের সিঁড়িতেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তারা।

মসজিদ চত্বরের আশেপাশে বিক্ষোভকারীদের মিছিল করতে দেয়া হয়
মসজিদ চত্বরের আশেপাশে বিক্ষোভকারীদের মিছিল করতে দেয়া হয়

পরে তাদের বের হওয়ার অনুমতি দিলে বায়তুল মোকাররম সংলগ্ন এলাকায় তারা মিছিল করে।

তবে পল্টনের দিকে এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয় এবং বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে জানান সংবাদদাতা আকবর হোসেন।

ঢাকার ধোলাইরপাড় চত্বরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দল সেই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে।

গত মাসে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী এক সম্মেলনে ভাস্কর্য বিরোধী কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

হেফাজতের শীর্ষ নেতার মন্তব্যের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ভাস্কর্য তৈরির পক্ষে তাদের শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়ার ইঙ্গিতও দেন।

বায়তুল মোকাররম সংলগ্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল
বায়তুল মোকাররম সংলগ্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল

সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (চৌঠা ডিসেম্বর) জুমার পর ভাস্কর্য স্থাপনের প্রতিবাদে আগেই মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছিল ইসলাম পন্থী বেশ কয়েকটি দল। তাদের বক্তব্য ছিল, ভাস্কর্যের নামে দেশে মূর্তি বানানো হচ্ছে।

ইসলামপন্থী দলগুলোর জোটের পক্ষ থেকে শুক্রবার বিক্ষোভ কর্মসূচির আহ্বান জানানোর পরদিনই বাংলাদেশ পুলিশ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে মনে করিয়ে দেয়া হয় যে ঢাকা শহরে কোন ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক সভা সমাবেশ করতে গেলে পুলিশের অনুমতির দরকার হয়।

ভাস্কর্যের বিপক্ষে বরাবরই কঠোর অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলছেন, তারা এর বিপক্ষে কথা বলেই যাবেন।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “(ভাস্কর্য) হতে দেবো কি দেবো না সেটা তো আসলে আমাদের বিষয় না। আমাদের বিষয় হল আমরা প্রতিবাদ করবো।”

ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ করে আসছে ইসলামী দলগুলো
ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ করে আসছে ইসলামী দলগুলো

“শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন করবো। যেটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের ঈমানি দাবিটা জানিয়েই যাব, কথা বলেই যাব। সেটা সরকার রাখবে কি রাখবে না সেটা সরকারের বিষয়।”

বাংলাদেশে এর আগেও ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায় বিচারের প্রতীক গ্রীক দেবী থেমিসের একটি ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের পর চাপের মুখে সেটি স্থানান্তর করা হয়।

সরিয়ে ফেলা হয় ঢাকায় বিমানবন্দর, জিপিও’র সামনের ভাস্কর্য।