সামনে আর পেছনে হাত ছুঁড়ে, ক্যামেরার সামনে নেচে চলেছিলেন মিয়ানমারের ফিটনেস প্রশিক্ষক খিন নিন ওয়াই। তবে সাধারণ এসব শরীর চর্চা দেশটির অসাধারণ একটি দিনেই করছিলেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি
প্রথম দেখায় ভিডিওটিকে একটি সাধারণ নাচের শরীর চর্চার ভিডিওর মতোই মনে হয়।
কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখা যায় যে, সশস্ত্র একটি গাড়ি বহর এগিয়ে চলেছে যা আসলে সাধারণ নয়।
অ্যারোবিকস শিক্ষক মিস খিন সোমবার সকালে ফেসবুকে তার ভিডিওটি পোস্ট করেন।
সেসময় মিয়ানমারের সামরিকবাহিনী একটি সেনা অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল, অং সান সু চিসহ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তার দলের অন্য নেতাদের গ্রেফতার করছিল।
এর পরে সামরিক বাহিনী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করে।
এর মধ্যেই মিস খিন গানের সুরে তার কোমর ঘুরিয়ে চলছিলেন। তিনি আসলে বুঝতেই পারেননি যে তার চারপাশে কী ঘটে চলেছে।
রাজধানী নেপিডোতে পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের দিকে যাওয়া প্রধান সড়কের মোড়ে ভিডিওটি ধারণ করেন তিনি।
তার পোস্টটি দেয়ার পর পরই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই মিস খিনের নাচ এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের মধ্যে যে বিপরীত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে ভিডিওটিতে সেটি নিয়েও কমেন্ট করেছেন।
“ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি আর গানের মধ্যে মিল রয়েছে,” মূল পোস্টে এমনটাই লিখেছেন তিনি। “সকালের খবর আসার আগ পর্যন্ত একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য ভিডিওটি ধারণ করছিলাম আমি। কেমন স্মৃতি হয়ে রইলো এটি!”
ভিডিওটি কি আসল?
হ্যাঁ, ভিডিওটি আসল। তবে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুহূর্তে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিলো তার কারণে ভিডিওটি নিয়ে প্রথমে কিছুটা সন্দেহ জাগে বৈকি।
কিন্তু যখন ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখা হয়, সাংবাদিক এবং ভুল তথ্য নিয়ে অনুসন্ধানকারীরা এটির উৎস সম্পর্কে যাচাই করে দেখেন, তখন আর এর সত্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে না।
বিবিসি মিস খিনের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং তিনি জানিয়েছেন যে এটি আসল।
আরেকটি ফেসবুক পোস্টে এই ফিটনেস প্রশিক্ষক জানিয়েছেন যে, “গত ১১ মাস যাবৎ” নাচের ভিডিও তৈরির জন্য ওই স্থানটি তার প্রিয় হয়ে উঠেছিল।
এই দাবি প্রমাণ করার জন্য একই স্থানে এর আগে নাচের আরো কিছু ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সমর্থকদের সমালোচনা থেকে বাঁচতে তিনি ফেসবুকে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
“কোন প্রতিষ্ঠানকে উপহাস করার জন্য বা নির্বোধের মতো আমি নাচ করিনি। একটি ফিটনেস ডান্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নাচছিলাম আমি,” মিস খিন লিখেন।
“নেপিডোতে যেহেতু এ ধরণের গাড়িবহর নতুন কিছু নয়, তাই আমি ভেবেছিলাম যে সেটি সাধারণ কোন গাড়িবহরই হবে আর এ জন্যই নাচ বন্ধ করিনি আমি।”
ভিডিওর প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া হয়েছে?
সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে দেখা এবং শেয়ার করা হয়েছে। টুইটারে ভারতীয় এক সাংবাদিকের করা একটি পোস্টই ১৬.৫ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে।
Khing Hnin Wai regularly films her aerobics videos on the empty roads of #Myanmar's capital #Naypyidaw. This week, her backdrop was a military coup.
Follow Khing Hnin Wai on Facebook: https://t.co/PYPWthuRAT pic.twitter.com/rmhirk2GtZ
— Mathias Peer (@mpeer) February 2, 2021
রেডিটে এ নিয়ে বেশ কিছু সৃজনশীল পোস্টও দেখা গেছে। যেখানে মিস খিনের ছবি অন্য কিছু ঐতিহাসিক ঘটনায়ও সংযুক্ত করা হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গত মাসে ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ায় ভিডিওটি কিছুটা ভিন্ন ভাবার্থ তৈরি করেছে। মিস খিন যে গানটি ব্যবহার করেছেন সেটি বিক্ষোভের গান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যা কর্তৃপক্ষকে ব্যঙ্গ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আম্পান ব্যাং জাগো নামের গানটি গত বছর একটি বিক্ষোভের সময় টিকটকে অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল।
কিন্তু মিস খিনের বেলায়, গানটি আসলে কাকতালীয়ভাবেই মিলে গেছে।
ফেসবুকে মিস খিন বলেছেন যে তার রাজনৈতিক বা কোন উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি বলেন যে, ভিডিওটি তিনি কোন “পরিহাস” বা “সেলিব্রেটি হওয়ার আশায়” পোস্ট করেননি।