যুক্তরাজ্যে মাদক আর অপরাধ চক্রে বাংলাদেশি প্রজন্ম

যুক্তরাজ্যে বাংলাদিশ বংশোদ্ভূত তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ ফের জড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদকের নেশায়। বিশেষ করে বাঙালি পাড়া হিসেবে খ্যাত পূর্ব লন্ডনে মাদকসেবীরা তাদের নেশার টাকা জোগাড় করতে কিংবা সহজ উপায়ে টাকা কামাতে জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে।

এই অপকর্মটির সঙ্গে নাইফ ক্রাইম বা ছুরি ব্যবহারজনিত অপরাধ, গ্যাং ফাইট, হামলা, চুরি, ছিনতাইয়ের মতো মারাত্মক অপরাধগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গত এক বছরে অন্তত ২০ জন বাংলাদেশি তরুণ মাদক বিক্রির দায়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন আদালতে দণ্ডিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাকে আমি কোনওভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে রাজি নই। দীর্ঘদিন থেকে টাওয়ার হ্যামলেটেসে আমাদের কিশোরদের একটি অংশ বিপদজনকভাবে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়েছে। মাদক থেকে শুরু করে এলাকাভিত্তিক প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে এরা জড়িত। পরিবার থেকে ছিটকে পড়া এসব কিশোররা অন্ধকার জগতের বাসিন্দা। এদের পক্ষে শুধু হামলা কেন, যে কোনও অপরাধ করা সম্ভব।

ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেছেন শিক্ষা‌বিদ ও সাংবা‌দিক ড. রেনু লুৎফা। তিনি বলেন, মাদক আমাদের কমিউনিটিকে খুবলে খাচ্ছে। ব্রিটিশ বাংলাদেশি অনেক মা-বাবাও মাদকাসক্ত। গত ৩০ বছর আগ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কমিউনিটিতে সচেতনতামূলক সম‌ন্বিত কার্যক্রমের জন‌্য লিখ‌ছি। এ নিয়ে কথা বলছি। সামা‌জিক সংগঠনগুলো যদি মাদকের বিরুদ্ধে সেমিনার, ক্যাম্পেইন করতো তাহলে আজকে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

লন্ডনের কমিউনিটি নেতা মু‌জিবুল হক ম‌নি বলেন, ২০১৪ সালের দিকে পু‌লি‌শ, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং কমিউনিটি নেতাদের সম‌ন্বিত প্রচেষ্টায় টাওয়ার হ্যামলেটসে বাংলা‌দেশী কমিউনিটির তরুণদের মধ্যে মাদক ও অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। এখন আবার মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।

সাম্প্রতিক করোনাকালীন সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ, খেলাধূলার সুযোগ নেই, কাজকর্ম নেই, ঘরে বসে বসে তরুণরা হতাশ হচ্ছে। মাদকাস‌ক্তি, মাদক ব্যবসা, গ্যাং ফাইট এর মতো অপরাধ অনেক বেড়ে যাবার অন্যতম কারণ হিসেবে এসব হতাশাকে দায়ী করা যায়।

কমিউনিটির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা সমাধানের দায় শুধু কাউন্সিলর বা জনপ্রতিনিধিদের নয় বরং এই দায়িত্ব কমিউনিটির প্রতিটি সচেতন সদস্যের। তরুণ সমাজের অভিভাবক, কাউন্সিলর, সামাজিক সংগঠন এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যদি সম্মিলিতভাবে এসব সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসে তাহলে এসব অপরাধ থেকে তরুণ সম্প্রদায়কে বাঁচানো অসম্ভব।

বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে দেশীয় ওয়েলফেয়ার নিয়ে, দেশীয় রাজনীতি নিয়ে এবং নিজেদের প্রচার প্রসার নিয়ে যতটুকু ব্যস্ত সে তুলনায় আমাদের তরুণ সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা মোটেও সোচ্চার বলে মনে হয় না। দেশীয় রাজনীতি নিয়ে প্রচুর সভা-সমিতি হয়। কিন্তু তরুন সমাজের অধঃপতন নিয়ে কোনও একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয় না। নিজেদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করার কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

টাওয়‌ার হ্যামলেটসের সাবেক ডেপু‌টি মেয়র অহিদ আহমেদ রবিবার বলেন, বিশেষ করে টাওয়ার হ্যামলেটসসহ পূর্ব লন্ডনে আমাদের প্রজন্ম নেশা ও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ প‌রি‌স্থি‌তির জন্য স্থানীয় প্রশাসনের ব‌্যার্থতা র‌য়ে‌ছে। মাদক ঠেকাতে নাফাসকে (মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা) আবারও কার্যকর করা দরকার। কাউন্সিলের পুলিশ টাস্কফোর্স অতীতের মতো সক্রিয় থাকলে এমন প‌রি‌স্থি‌তি তৈরি হতো না। পুরো টাওয়ার হ্যামলেটসে সিসিটিভিতে বিনিয়োগ থাকলে মাদক ও অপরাধ প্রবণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতো না।