পাট খাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী: পাটমন্ত্রী

রফতানি বাণিজ্যে পাট খাত বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পাটখাত রফতানি বাণিজ্যে চামড়াকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে।’

অপরদিকে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। পাটের সম্ভাবনার সঙ্গে শাকসবজি ও ফলমূল রফতানির সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে বছরে পাট ও কৃষিপণ্যের রফতানি আয় শিগগিরই ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

রবিবার (৬ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবসের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট সচিব আব্দুর রউফ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১১ জনকে জাতীয় পাট পুরস্কার দেওয়া হয়।

পাট মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি ও জোট সরকারের আমলে দেশের পাটশিল্প ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে পাটের হারানো সুদিন প্রায় ফিরিয়ে এনেছে। ২০০৫-০৬ সালে পাটের উৎপাদন ছিল মাত্র ১০ লাখ মেট্টিক টন। বর্তমানে তা প্রায় ১৭ লাখ মেট্টিক টন। ১২ বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পাটের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন, যা ভারতের জাতের চেয়ে অনেক ভালো। কৃষকদের মাঝে এটির চাষ জনপ্রিয় করতে কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। তিন বছর পরে ভারত থেকে পাটবীজ আর আমদানি করতে হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেকবার ভারতকে বলেছি, অ্যান্টি ডাম্পিং না করতে কিন্তু তারা কথা শোনে না। তবে বর্তমান সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পাটের উৎপাদন ও রফতানি-রফতানি বৃদ্ধিতে কাজ করছে। যাতে ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমরা টিকে থাকতে পারি। সোনালি আঁশের সুদিন আবার ফিরিয়ে আনতে পারি।’

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার পাট শিল্পের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিবছর পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাট খাত ও পাট শিল্পকে সুসংহত করার লক্ষ্যে ‘পাট আইন, ২০১৭’ ও ‘জাতীয় পাটনীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ৩৪-৪০টি চারকোল উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫-২০ হাজার লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে চারকোল রফতানি করে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। চীন বাংলাদেশের উৎপাদিত চারকোলের বড় বাজার।’

এর আগে সকালে জাতীয় পাট দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সচিব আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম, অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান, বস্ত্র অধিদফতরের মহাপরিচালক নুরুজ্জামান, পাট খাতের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।