দেশের মানুষ যেন সেবাবঞ্চিত না হয়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি কথা মনে রাখতে হবে—বাংলাদেশের জনগণ, তারা যেন কখনও সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কারণ, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্যই তো এই স্বাধীনতা।

রবিবার (৩ এপ্রিল) আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

কক্সবাজারে বিসিএস প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে আমরা একটি ভালো জায়গা নিচ্ছি। কারণ, কোর্স আরেকটু বেশি সময় নিয়েই করা উচিত। সুন্দর পরিবেশে হওয়া উচিত। সেই জন্য কক্সবাজারে বড় জায়গা নিয়ে সুন্দর অ্যাকাডেমি করে দিবো। যাতে সেখানে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন, আর যারা দিবেন, তারাও ভালো একটা পরিবেশ পাবেন। সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছি। সেটার কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করা হোক, সেটাই আমি চাই।

করোনাভাইরাসের কারণে সশরীরের উপস্থিত থাকতে পারেননি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় আমাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে, বিশেষ জেলে থাকতে হয়েছে। সেগুলো ছিল সাবজেল, ছোট কারাগার। আর এখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে বড় কারাগারে আছি, এইটুকু বলতে পারি। সেই জন্য সব জায়গায় যাতায়াতটা এত সীমিত, সীমাবদ্ধতা যে আপনাদের কাছে সরাসরি আসতে পারলাম না, নিজের হাতে সনদ দিতে পারলাম না। এটা দুঃখজনক।

মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন ব্যবস্থাকে গণমুখী করার পদক্ষেপ নেন এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির দায়িত্ব দেন। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হতো। কিন্তু সেই সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি। ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যার পর, এই দেশের মানুষ শোষণ ও বঞ্চনার শিকারই থেকে যায়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকারি কর্মকর্তারা প্রচেষ্টা নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, এই দেশ এগিয়ে যাক।’

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরে সবার বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণ আমরা কীভাবে করতে পারি, সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।

জাতির পিতা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণ করে তাদের পুনর্বাসন শুরু করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু সেটাও সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না।’

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-১-এর অধীনে ব্যারাক হাউজ তৈরি এবং বর্তমান সরকারের সময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীনে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি কর্মকর্তা আন্তরিকতার সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে গৃহহারা ও ভূমিহীন মানুষকে ঘরে দিয়ে দিচ্ছেন। ঘর পাওয়ার পরে মানুষের যে হাসিটা, এর চেয়ে জীবনে আর কিছু পাওয়ার থাকে না।

শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নতিটা সম্ভব হয়।

মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা একের পর এক ক্ষমতায় এসেছিল ঠিকই। যেমন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ বা খালেদা জিয়া—এরা কেউ কিন্তু কখনও আমাদের স্থল সীমানায় যে অধিকার রয়েছে, ছিটমহলগুলো যে বিনিময় করতে হবে—এই বিষয়গুলো কখনও তুলে ধরেনি বা উদ্যোগ নেয়নি বা কথাও বলেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের দুর্বলতা ছিল, সেটা আপনারাই বুঝতে পারেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের আলাদা শক্তি থাকে, মনোবল থাকে। আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের সেই শক্তি থাকে না।

উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অর্থনীতি মজবুত হয়েছে। জাতিসংঘের চাহিদা মোতাবেক উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। শুধু মর্যাদা পেলেই হবে না, উন্নয়নশীল দেশে হিসেবে নিজেদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের আরও শক্তিশালী করতে হবে দেশকে। কারণ, এই বাংলাদেশে একটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে না, একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে, শিক্ষার সুযোগ পাবে, উন্নত জীবন পাবে—এটাই তো জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ছিল।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম প্রমুখ।