আলু ভর্তা দিয়ে সেহরি, মুড়ি ও ডাল ভুনা দিয়ে ইফতার

বিএফডিসিতে রয়েছে ১৮টি পেশাজীবী সংগঠন। পেশাগত স্বার্থ সুরক্ষা ছাড়াও সুখ-দুঃখ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন সংগঠনের সদস্যরা। যেকোনো উৎসবে মেতে ওঠেন তাঁরা। সাধারণত বাৎসরিক বনভোজন ছাড়াও রোজায় ইফতার পার্টি করে প্রায় সব সংগঠন। পাশাপাশি সংগঠনগুলোর অফিসে প্রতিদিনই থাকে ইফতারের আয়োজন। এবার চিত্র ভিন্ন।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় পুরো দেশ লকডাউনে। যে কারণে শুটিং, এডিটিং, ডাবিং সবই বন্ধ। সব কিছুর মতো বন্ধ রয়েছে এফডিসিও। যে কারণে নেই ইফতারের কোনো আয়োজন। এতে বিপাকে পড়েছেন নিরাপত্তাকর্মীসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারী।

এফডিসিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন ১৭ জন। সব কিছু বন্ধ থাকলেও তাঁরা ডিউটি করে যাচ্ছেন দিনরাত। এফডিসির মসজিদে রয়েছেন দুজন ইমাম ও মোয়াজ্জেম। আছেন দুজন প্রডাকশন বয়। একজন আলাউদ্দিন ও অন্যজন নাছির।

তাঁরা সবাই প্রতি বছর এফডিসির বিভিন্ন সংগঠনের অফিসে ইফতার করেন। মার্চের বেতন না হওয়ায় টাকা দিয়ে কিনে ইফতার করার সামর্থ্য নেই সিকিউরিটি, ইমাম বা মোয়াজ্জেমের। এমনটাই বলেছেন তাঁরা। প্রডাকশন বয় দুজন তো এফডিসিতে যাওয়া লোকদের খেদমত করেই জোগাড় করেন নিজের আহার। প্রডাকশন বয় হিসেবে কাজ করেন, মাঝেমধ্যে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতেও দেখা যায় তাঁদের।

এফডিসির সিকিউরিটি ইনচার্জ মোহাম্মদ জামাল আজ প্রথম ইফতারের পর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে বেতন পেয়েছি। মার্চ মাসের বেতন পাইনি। এফডিসিতে আসা ত্রাণ থেকে কিছু ত্রাণ আমাদের দিয়েছেন জায়েদ খান ভাই। তাই দিয়ে কোনোমতে ভাত খাচ্ছি। ত্রাণের প্যাকেটে থাকে চাল, আলু, ডাল আর পেঁয়াজ। এখন রোজা এসেছে। সব সমিতি বন্ধ, ইফতার নিয়ে বিপাকে পড়েছি। মসজিদের হুজুরদেরও একই অবস্থা। আলু ভর্তা দিয়ে সেহরি খেয়ে রোজা রেখেছি, পানি খেয়ে আজ ইফতার করেছি। নামাজ পরে খেয়েছি মুড়ির সঙ্গে ডাল ভুনা। কিছুদিন আগে এক ভাই দুই কেজি মুড়ি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আর উপায় দেখছি না। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আমরা, কতই বা আর বেতন পাই বলেন!’

মোহাম্মদ জামাল আরো বলেন, ‘আমরা তো তবু কিছু খাবার পাচ্ছি, আমাদের মধ্যে যাঁরা লাইটে কাজ করেন, যাঁরা ক্রেন চালান, ক্যামেরায় কাজ করেন, তাঁদের অবস্থা আরো খারাপ। ঘর থেকে বের হতে পারছে না। এফডিসিতে এসে ত্রাণও নিতে পারছে না।’

৬০ বছর বয়স আলাউদ্দিনের। বাড়ি বরিশাল, বিয়ে করেননি। চলচ্চিত্রের রঙিন দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন বয়স ষাট হয়েছে খেয়ালই নেই। বাড়িতে কেউ নেই, তাই এফডিসিতেই থাকেন সারা বছর। সরকারি অনুমতি নেই, তাই রাতে গেটের বাইরে বসে থাকেন। দিনের বেলা সুইমিং পুলের পাশে ঘুমিয়ে পড়েন।

নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে মুড়ি আর ডাল ভুনা খেয়েই তৃপ্ত আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ পাক অনেক ভালো খাইয়েছেন। জীবন তো পুরোটাই শেষ। পানি খেয়ে অনেক দিনই পার করেছি। সেহরি ও ইফতারও করব পানি খেয়ে। কার কাছে কী-ই বা চাইব। রিজিকে থাকলে খাব, না হলে পানি তো আছেই। এফডিসি খোলা থাকলে অন্তত ইফতার নিয়ে চিন্তা করতে হতো না।’