বিদ্যানন্দের প্রধান কিশোর কুমারের পদত্যাগ

দেশজুড়ে আলোচিত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘বিদ্যানন্দ’র প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কিশোর কুমার দাশ।

মঙ্গলবার বিদ্যানন্দের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, ‘বিদ্যানন্দ’র কাজ বিদ্যা বা শিক্ষা দিয়ে শুরু হলেও বিভিন্ন সময় সংগঠনটির সঙ্গে ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা খুঁজেছেন এক শ্রেণির ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। আর এ কারণেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদ থেকে কিশোর কুমার দাশ সরে গেলেন।’

এ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, ভালো উদ্যোগ নিয়ে পথ চলা সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতার পদত্যাগ এদের পথচলা বাধাগ্রস্ত করবে।

অনেকেই কিশোর কুমার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন।

যদিও বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মৃত্যু পর্যন্ত পদ আঁকড়ে ধরে রাখার নীতিতে বিদ্যানন্দের কর্মীরা বিশ্বাসী নয়। এর আগেও আমাদের বিভিন্ন পদে রদবদল হয়েছে, এতে কাজে তফাৎ হয় না। আর বিদ্যানন্দের উদ্যোক্তা চলে যাচ্ছেন না, তিনি আরেকটু ছোট দায়িত্বে থাকছেন। নতুন কারো নেতৃত্বে ভিন্ন রকমের আইডিয়া আসবে, এটাই আমাদের বিশ্বাস। নেতৃত্ব নির্বাচনেও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।’

নিজেদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে বিদ্যানন্দ এক পোস্টে জানায়, বিদ্যানন্দ নামটি দিয়েছেন এক মুসলমান ব্র্যান্ড এক্সপার্ট। আনন্দের মাধ্যমে বিদ্যা অর্জন স্লোগানের সঙ্গে মিল রেখে তিনি নামটি দিয়েছিলেন। অনেকেই এটাকে ব্যক্তির নাম থেকে ভেবে ভুল করেন। এজন্য তারা দুই বছর আগে নাম পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটে করেন এবং স্বেচ্ছাসেবকরা নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে ভোট দেয়।

পোস্টে আরো বলা হয়, ‘বিদ্যানন্দের প্রবাসী উদ্যোক্তা সশরীরে খুব অল্পই সময় দিতে পারেন। ৯০ ভাগ মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরাই চালিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবুও উদ্যোক্তার ধর্ম পরিচয়ে অনেকেই অপপ্রচার চালায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে। যাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কার্যক্রম, অনুদানের গতি। গত মাসেই বিদ্যানন্দের প্রধান পদত্যাগের কথা জানিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবকদের। সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারে নয়, বরঞ্চ ব্যক্তিগতত্যাগে স্বেচ্ছাসেবকদের অনুপ্রাণিত করার এবং নতুন মেধায় প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্নে এমন সিদ্ধান্ত। আর তিনি প্রধানের পদ ছাড়লেও বিদ্যানন্দ ছাড়ছেন না, বরঞ্চ সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন।’

বিদ্যানন্দ জানায়, আমরা বিষয়টি প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম চলমান ক্যাম্পেইনের পরে। কিন্তু কিছুদিন ধরে চলা মাত্রাতিরিক্ত সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারে জল ঢালতে খবরটি আজকে শেয়ার করলাম। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বিষয়টি হতাশার নয়। পদ আঁকড়ে থাকার মানসিকতার এই সমাজে উল্টা পথে হাঁটতে পারার জন্য গর্ব হচ্ছে। আর বিদ্যানন্দে পদে কি যায় আসে? এখানে তো কাজটাই আসল, আর সেটাই আমরা করে ছাড়বো।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি মূলত সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সহায়ক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে তারা।

সংগঠনের এক টাকায় আহার নামের একটি প্রকল্পও বেশ পরিচিত। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই ত্রাণ সহায়তা নিয়ে সাধারণের পাশে রয়েছে সংস্থাটি।