২১ বছর পর আরেক সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’

বৈশ্বিক ঝড় নির্ণয়ক সংস্থা অ্যাকুওয়েদার বলছে, ২১ বছর আগে ‘উড়িষ্যা সুপার সাইক্লোনে’র পর বঙ্গোপসাগরে সুপার সাইক্লোন হয়ে এসেছে ‘আম্পান’।

ধারণা করা হচ্ছে, ‘আম্পান’ প্রলয়ঙ্করী ‘অতি ঘূর্ণিঝড়’ হয়ে বুধবার সকাল থেকে বিকাল বা সন্ধ্যায় বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব উপকূলজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে।

অ্যাকুওয়েদারের আন্তর্জাতিক পূর্বাভাসক জেসন নিকোলস বলছেন, ‘১৯৯৯ সালে ‘উড়িষ্যা সাইক্লোনে’র পরে ‘আম্পান’ বঙ্গোপসাগরে প্রথম কোনো সুপার সাইক্লোনিক ঝড়।’

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এ আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এখানকার অনুকূল পরিবেশ এটিকে আরো শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, ‘গতকাল সোমবার রাতে দেখা গেছে আম্পান বঙ্গোপসাগরে এ যাবতকালের ঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হয়ে উঠেছে, যা ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত (১৬৫ মাইল) গতিবেগসহ তীব্র হচ্ছে।’

বাংলাদেশ এবং ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ‘আম্পান’উত্তর-পশ্চিমে সরে গিয়ে সুন্দরবনের নিকটবর্তী হাতিয়া-ভোলা এবং ভারতের দিঘার মধ্যবর্তী দুটি উপকূলরেখায় আঘাত হানতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় সুপার সাইক্লোনটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৮৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজারের ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা বন্দরের ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

তবে ভারতের আবহাওয়া জানিয়েছে, ‘আম্পান’ আজ সকাল পর্যন্ত গত ছয় ঘণ্টায় প্রতি ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার বেগে এগিয়েছে।’

অ্যাকুওয়েদারের ইঙ্গিত, ‘আম্পান’ উপকূলীয় তটরেখ বরাবর এসে স্থলভাগে আঘাত হানার সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ জুড়ে ভয়ঙ্কর ঝড়ের পাশাপাশি ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস তৈরি করবে।

‘আম্পান’কে বর্তমানে আটলান্টিক এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্যাটাগরি-৫ হারিকেন হিসাবে চিহ্নিত করেছে অ্যাকুওয়েদার। ১৯৯৯ ওড়িষ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সর্পিল গতিতে এগিয়ে আসা ঝড়টির শনিবার বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিওএমও) থাইল্যান্ডের প্রস্তাবে নামকরণ করে ‘আম্পান’।

অ্যাকুওয়েদারের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ অ্যাডাম ডাউটি বলেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিশাল নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হওয়ার যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে, কারণ বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ঝড়ো হাওয়া জলোচ্ছ্বাসকে প্রবাহিত করবে।’

আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা, অমাবস্যার প্রভাবের কারণে ‘আম্পান’ বাড়তি শক্তি সঞ্চয় করে বিশেষত, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রামের মধ্য উপকূলের অঞ্চলগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি প্লাবিত হতে পারে।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬৬ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। প্রাণহানীর হিসাবে এটিকে বিশ্ব ইতিহাসের পঞ্চমতম মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আঘাত হানার পর ঝড়টি হিমালয়ের উচ্চ পর্বতশ্রেণীতে গিয়ে আরো ঘণীভূত হবে। এতে পূর্ব হিমালয় পর্বতমালায় প্রবল বর্ষণের সৃষ্টি করবে।

যে কারণে উত্তর-পূর্ব ভারত, ভুটান এবং উত্তর বাংলাদেশ জুড়ে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।