করোনা রোগীদের সেবা দিতে আসছেন নিউইয়র্কের সেই সুপার হিরো চিকিৎসক, ডা. ফেরদৌস খন্দকার

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার। তার বিরোচিত ভূমিকার কথা দেশটির প্রবাসীদের মুখে মুখে। প্রবাসীদের কাছে ভরসার প্রতীক ‘মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে’র এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

এবার করোনা আক্রান্তদের জন্য আজ চিকিৎসক দল নিয়ে এক বিশেষ ফ্লাইটে দেশে পৌঁছানোর কথা। করোনায় মৃত্যুর ভয়ে বিশ্বের অনেক বড় বড় ডাক্তার যেখানে চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন, সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডা. ফেরদৌস । বিশেষ করে অসুস্থ প্রবাসী বাংলাদেশিদের কারও ফোন পেলেই ছুটছেন গাড়ি নিয়ে, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং খাদ্য সামগ্রীও।

হাজার হাজার মাইল দূরের বিভিন্ন সিটিতে করোনা রোগীদের দিন-রাত চিকিৎসাসহ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিনই ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা বিরামহীন সেবা দিয়েছেন করোনা আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের। এমন ব্যস্ততার মধ্যেই একটি দিনের জন্য ভোলেননি বাংলাদেশের মানুষের কথা।

দেশের এই সংকটে প্রতিদিনই দুইবার ফেসবুক-ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে করোনা বিষয়ে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার এই কর্মকাণ্ড দেশটির প্রভাবশালী বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারও করেছে। তবে ধীরে ধীরে নিউইয়র্ক শহরের করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাওয়ায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘নিউইয়র্কের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঘরে থাকার কারণে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে করোনা আক্রান্ত নেই বললেও চলে। কিছুদিন আগেও বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। অন্যদিকে বাংলাদেশে আস্তে আস্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য আমার মনে হচ্ছে মহামারির এই দুঃসময়ে দেশের মানুষের পাশে থাকাটা খুবই জরুরি’।

তিনি বলেন, ‘দেশ আর দেশের মানুষের জন্য সবসময় মন কাঁদে। ফ্লাইট চালু থাকলে আরও আগেই যেতাম। আমার দ্বারা যদি কিছু মানুষের উপকার হয় তাহলে সেটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতা এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এলাকায় গেলে আমি সেই কাজটি খুব সহজেই করতে পারব’।

নিউইয়র্কে বিপুলসংখ্যক কাগজপত্রহীন অভিবাসী রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশিও রয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়েও এসব কাগজপত্রহীন মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক প্রণোদনা নেই। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। আর এই মহাদুর্যোগে তাই হাজারো ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মানুষের পাশে, বিশেষত স্বদেশিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের ডা. ফেরদৌস।

রীতিমত ‘সুপার হিরো’ বনে যাওয়া ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি বলছেন, এই চিকিৎসক শুধু কমিউনিটিরই নয়, সারা বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন এমন উন্নত জনপদে। তার জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটি গর্বিত।