লকডাউনে ঘর থেকে বেরিয়ে ঘরছাড়া

রাজধানীর পরীবাগের দিগন্ত কমপ্লেক্সের ১৫ নিরাপত্তাকর্মী থাকেন সরকারের ‘রেড জোন’ ঘোষিত পূর্ব রাজাবাজার এলাকার একটি ফ্লাটে। আজ সকালে ওই ফ্লাট থেকে ১১ জন নিরাপত্তাকর্মী জামা-কাপড় ও বিছানা নিয়ে চলে যান কর্মস্থলে। কিন্তু গতরাতে চারজনের ডিউটি থাকায় তাঁরা রাতে বাসায় ফিরতে পারেননি। সেজন্য তাঁদের জিনিসপত্র থেকে গেছে ওই ফ্লাটে।

দায়িত্ব শেষে রাতের নিরাপত্তায় থাকা আবদুল মজিদ, ইলিয়াস আলী, কবির হোসেন এবং মুরাদ আজ বুধবার বিকেল ৪টার দিকে গিয়েছিলেন পূর্ব রাজাবাজারের প্রবেশদ্বার গ্রিন রোডে। কিন্তু তাঁদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঢুকতে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আর ঢুকতে পারবেন না। অফিসের বসকে বলে সেখানেই থাকতে হবে আপনাদেরকে।’

শুধু এই চারজনই নয়, পূর্ব রাজাবাজারের এমন অনেক বাসিন্দা পড়েছেন ভোগান্তিতে। তাঁরাও ঢুকতে পারছেন না ভেতরে। পারছেন না বের হতেও। ওই পুরো এলাকায় মোট আটটি ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। শুধুমাত্র গ্রিন রোডের নাজনিন স্কুলের পাশের প্রবেশদ্বারটিই খোলা রাখা হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন স্বাস্থ্যকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সরকার এই এলাকাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন কার্যকর করেছে।

নিরাপত্তাকর্মী আবদুল মজিদ এনটিভি অনলাইনকে বলছিলেন, ‘সব জিনিসপত্র এখানে। জামা-কাপড় আর বেড নিতে না পারলে অফিসে থাকব কীভাবে? কিন্তু ঢুকতে দিচ্ছে না। গতকাল রাতে আসতে পারেনি ডিউটি ছিল বলে। এখন কী করব? এরা বলছে, চাবি দিয়ে দিতে তারা ঘরে গিয়ে সব বের করে দেবে। কিন্তু ঘরে তো কেউ নেই। এভাবে দেব কীভাবে?’ মজিদের পাশে থাকা বাকি তিনজনও একই সূরে কথা বললেন।

ওই প্রবেশদ্বারের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলল ফরিদুর রহমান খানের ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘পুরো পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে আটটি ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ হলের পাশের প্রবেশদ্বারটি খোলা রাখা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে ঢোকা এবং বের হওয়ার জন্য। আমরা সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মী বা হাসপাতালে কাজ করেন এমন মানুষ ছাড়া কাউকেই ঢুকতে এবং বের হতে দিচ্ছি না। কিছু করার নেই। লকডাউন মানেই লকডাউন।’

মাসুদ হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে এখানে লকডাউন কার্যকর করতে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভেতরের সব দোকানপাট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা মেটাতে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মোট ২৯টি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যে ভেতরে খাদ্য বিক্রি করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আটটি ভ্যান ভেতরে প্রবেশ করেছে। বাইরে আছেন এমন কাউকে আমরা আর ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। আবার ভেতর থেকে কাউকে বাইরে যেতে দিচ্ছি না। এখানে মোট ৮৫ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন স্থানীয়দের উপকারে। কারো কিছু প্রয়োজন হলে আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

সেখান থেকে তেজগাঁও কলেজের পাশে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব রাজাবাজার আমতলী মোড়ে ঢুকতে প্রবেশপথটি বাঁশ দিয়ে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে। কিন্তু কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না ভেতরে। সেখানে দায়িত্বরত আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শেরেবাংলা থানার উপপরিদর্শক শুধাংশু সরকার। তিনি বলছিলেন, ‘এখন তো ঝামেলা নেই। ঝামেলা হয়েছিল সকালের অফিস টাইমে। অফিসের উদ্দেশে সবার বের হয়ে এসে দেখলো আর কাউকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও সবাইকে বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

সেখানে দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাসুম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলছিলেন, ‘কাল রাতে কাজে একটু বাইরে গিয়েছিলাম। এখন আর নিজের বাসায় ঢুকতে পারছি না। কোথায় গিয়ে থাকব এখন? কেউ তো জায়গাও দিবে না।’

পূর্ব রাজাবাজার আমতলী মোড়ের এক ভবনের বাসিন্দা আবু তালেব। তিনি মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভেতরে আর্মি (সেনাবাহিনী ঘুরছে। আমরা বাইরেও বের হতে পারছি না। প্রয়োজনীয় জিনিসও কিনতে পারছি না। শুনেছি কয়েকটি ভ্যান নাকি ভেতরে ঢুকে জিনিসপত্র বিক্রি করছে। কিন্তু সে তো আইবিএ হলের ওখানে। যেতেও পারছি না।’

পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই এলাকার প্রবেশ ও বের হবার পথ। এলাকাজুড়ে অবস্থান নিয়ে আছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জরুরি নিত্যপণ্য, ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে রেড জোনের মধ্যে না পড়লেও পাশের দু-একটি এলাকা লকডাউনের ভেতরে নিয়ে আসায় বিপাকে পড়েন এলাকাবাসী।