চীনে নতুন করে করোনার সংক্রমণ, এবার আলোচনায় স্যামন মাছ

স্যামন মাছ থেকেই কি ছড়াচ্ছে চীনের বেইজিংয়ে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ? চীনে দ্বিতীয় দফা ভাইরাসের হানায় নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মাছ-মাংসের বাজারের দিকেই। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, বেইজিংয়ে নতুন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণ এখনো অজানা। স্যামন মাছের আমদানি বা প্যাকেজিং থেকেই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, এটাই প্রাথমিক কারণ হতে পারে না বলে মনে করছে সংস্থাটি।

চীনে গত কয়েক দিনে নতুন করে করোনার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গত রোববার ৫৭ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিল। গতকাল সোমবার আরো ৪৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বেইজিংয়ের ১০টি স্থানে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর ছড়ায়, বেইজিংয়ের জিনফাদি বাজার থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বিশেষ করে স্যামন মাছ যেখানে কাটা হয়, সেই চপিং বোর্ডে ভাইরাস পাওয়া গেছে। এমনকি করোনাভাইরাস আক্রান্তরা ওই জিনফাদি বাজারে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করা হয়। তার পরেই বেইজিংয়ের অন্যতম বড় সুপারমার্কেট বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। স্যামন মাছের কেনাবেচাতেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনেরও দাবি, জিনফাদি সুপারমার্কেটের মাছ-মাংসের বাজার থেকেই নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। নতুন ১০০টি সংক্রমণের যোগসূত্র রয়েছে ওই বাজারের সঙ্গেই। চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের বিশেষজ্ঞ জেং গুয়াং বলেছেন, স্যামন মাছই সংক্রমণের উৎস কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাছের মাধ্যমে কীভাবে ভাইরাস ছড়াল, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বেইজিংয়ের বাসিন্দাদের আপাতত স্যামন মাছ খাওয়া বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। স্যামন মাছ শুধু নয়, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ যেকোনো সি-ফুড বা সামুদ্রিক খাবার খেতেই নিষেধ করেছেন বেইজিংয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

চীনের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রধান উ জুনইউ বলেছেন, হিমায়িত মাছ-মাংস বা এর প্যাকেজিংয়ের ওপর ভাইরাস অন্তত তিন মাস বেঁচে থাকতে পারে। তাই অনুমান করা হচ্ছে হিমায়িত সামুদ্রিক খাবার নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে।

গত বছর ডিসেম্বরে চীনে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর মেলার পরে আঙুল উঠেছিল  মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের মাংসের বাজারের দিকেই। দাবি করা হয়েছিল, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে ওই বাজার থেকেই। হুবেইসহ চীনের কয়েকটি প্রদেশে খোলা বাজারেই অবাধে চলে বন্য জীবজন্তুর মাংস কেনাবেচা। বাদুড়, কুকুর, খরগোশ, বিড়াল, বনরুই, সাপ, ইঁদুর ছাড়াও অনেক বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর মাংস বিক্রি হয় এমন বাজারে। খোলা বাজারেরই যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় বন্যপ্রাণীর কাটাছেঁড়া দেহ। মাংস তাজা রাখতে বরফ গলিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারা বাজারে। বারবার পানি ছিটানো হয় সি-ফুড স্টলগুলোতে। সে কারণেই এমন বাজারকে ওয়েট মার্কেট বা ভেজা বাজার বলে। করোনাভাইরাস মহামারি হওয়ার পর থেকেই চীন সরকার সব রকমের বন্যজন্তু বিক্রি ও খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ বছরের জানুয়ারি মাসেই উহানের কাঁচা মাছ-মাংসের বাজার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় বেইজিং। চীনের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনও দাবি করে, চীনের ওয়েট মার্কেট থেকেই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল।

প্রথমে মুখ না খুললেও করোনা সংক্রমণের নেপথ্যে উহানের সি-ফুড মার্কেটের বড় ভূমিকা ছিল এমনটা মেনে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। এদিকে সংস্থাটির ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের প্রধান মাইক রায়ান বলেছেন, স্যামন মাছের প্যাকেজিংয়ের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে ইউরোপ থেকে আমদানি করা সি-ফুডের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বেইজিংয়ের কাঁচা মাংসের বাজারসংলগ্ন বাসিন্দাদের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তা ছাড়া গত এক সপ্তাহে যারা ওই বাজারে গেছে, তাদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।  ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, বেইজিংয়ে ৩৬ জন আক্রান্ত ছাড়া পার্শ্ববর্তী হুবেই প্রদেশে তিনজন আক্রান্ত হয়েছে। বাকি ১০ জন আক্রান্ত সম্প্রতি বিদেশ থেকে চীনে ফিরেছে বলে খবর।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, কাঁচা মাছ-মাংসের বাজারের পাশাপাশি ফল ও সবজির বাজারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার ৪৬ হাজার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে ১০ হাজার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাজারের আশপাশের এলাকায় লকডাউন করা হয়েছে। কাউকে বাড়ির বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। এ সময় পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলো থেকে কাউকে বেইজিংয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। ওই এলাকার সব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেইজিং শহরজুড়ে প্রাইমারি স্কুল খোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।