ভারতীয় থিয়েটারের কিংবদন্তী ইব্রাহিম আলকাজি আর নেই!

‘ভারতীয় থিয়েটারকে আমূল পাল্টে ফেলেছিলেন কিংবদন্তী ইব্রাহিম আলকাজি। অনেকের মতেই তিনি আধুনিক ভারতীয় থিয়েটার জগতের রূপকার। মঙ্গলবার চলে গেলেন তিনি।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। আলকাজির মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন এই থিয়েটার ব্যক্তিত্বের পুত্র ফয়জল আলকাজি।,

চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে মুম্বাইয়ের থিয়েটার জগতের পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি। তবে অচিরেই সেই খ্যাতি ছেড়ে দিল্লি চলে আসেন আলকাজি। তখন তার বয়স ৩৭ বছর। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় আগামি ১৫ বছর একটানা ডিরেক্টরের পদে ছিলেন তিনি। ১৯৬২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে অভিনয়ের স্কুলের দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি, এখন পর্যন্ত তিনি এনএসডি’র ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘসময় কাটানো ডিরেক্টর।

মডার্ন ইন্ডিয়ান থিয়েটারের অ-আ-ক-খ বদলে দিয়েছিলেন আলকাজি। তার হাত ধরেই এনএসডি’র পাঠ্যক্রমে এসেছিল বিপুল রদবদল। শিল্পের প্রশংসক ছিলেন তিনি, মুক্তমনা চিন্তাধারার জন্য সবসময়ই প্রশংসা কুড়িয়েছেন আলকাজি। সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়েছিল তার ভাবনা। বিজয় মেহতা, ওম শিবপুরি, বলরাজ পন্ডিত, ওম পুরি, নাসিরুদ্দিন শাহ, মনোহর সিং-এর মতো অসংখ্য প্রতিভাবনা অভিনেতাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। আলকাজি ছাড়া অসম্পূর্ণ ভারতীয় থিয়েটারের চালচিত্র।

১৮ই অক্টোবর ১৯২৫ সালে পুনেতে জন্ম ইব্রাহিম আলকাজির। জন্মসূত্রে তার বাবা সৌদি আরবীয়, মা কুয়েতের বাসিন্দা ছিলেন। নয় ভাই-বোন ছিলেন আলকাজিরা। দেশভাগের পর সকলেই পাকিস্তানে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করেন। তবে ভারতেই থেকে গিয়েছিলেন আলকাজি। মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের এই ছাত্র সুলতান ‘ববি’ পদমসীর থিয়েটার গ্রুপ কোম্পানিতে যোগ দেন চল্লিশের দশকের গোড়ায়। এরপর লন্ডনে গিয়ে রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ ড্রামাটিক আর্টসে যোগ দেন তিনি। সালটা ১৯৪৭। তিন বছরের মধ্যে বিবিসি পুরস্কার জিতে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। ৫০টিরও বেশি নাটকের নির্দেশনার দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। গিরীশ কন্নড়ের তুঘলক, মোহন রাকেশের আষাড় কা এক দিন, ধর্মবীর ভারতীর অন্ধ যুগ এবং শেক্সপিয়ারের লেখা একাধিক নাটক ও অজস্র গ্রীক নাটক ভারতীয় দর্শকদের কথা মাথায় রেখে মঞ্চস্থ করতেন ইব্রাহিম আলকাজি।

ভারতীয় থিয়েটার জগতে তার অবদানের জন্য ভারত সরকারের তরফে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তার চলে যাওয়ায় ভারতীয় থিয়েটারে একটা যুগের অবসান ঘটল।,