বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কে কোথায় আছে?

`জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনি এখনো পলাতক। দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থাকার পর এবছরই এপ্রিল মাসে অন্যতম খুঁনি মাজেদকে গ্রেফতার করে এনে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মাজেদকে বাদ দিলে বঙ্গবন্ধুর আরও পাঁচ খুনি পলাতক আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে অবস্থান করছে রাশেদ চৌধুরী এবং কানাডায় স্বাভাবিকভাবেই অবস্থান করছে নূর চৌধুরী। এছাড়া শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আব্দুর রশিদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন কোথায় আছে জানে না সরকার।

রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন:-

বঙ্গবন্ধুর এই খুনি ইউরোপের একটি দেশে পালিয়ে আছে বলে ধারণা করা হলেও এই সম্পর্কে নিশ্চিত কোনও তথ্য নেই সরকারের হাতে। বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, দেশে বিদেশে সমানতালে চক্রান্ত না থাকলে এভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে বিদেশে একজন খুনি পালিয়ে থাকতে পারে না।

                রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন

রাশেদ চৌধুরী :-

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী ১৯৯৬ সালে ব্রাজিল থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে ২০০৪ সালে এটি মঞ্জুর হয়। এরপর মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এর বিরুদ্ধে আপিল করে। দুই বছর আইনি লড়াইয়ের পরে ২০০৬ সালেও রাশেদ চৌধুরীর পক্ষে রায় দেওয়া হয়।

                              রাশেদ চৌধুরী

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চেয়ে অন্তত পাঁচবার আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৮ ও ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুবার চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।

এ বছরের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর সংক্রান্ত কাগজপত্র পুনর্বিবেচনার জন্য চেয়ে পাঠিয়েছে। বিভিন্ন আইনজীবীর কাছে এই বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছেন তিনি। আশা করা হচ্ছে এবছরের মধ্যে এ বিষয়ে একটি আইনি সিদ্ধান্ত দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল।

নূর চৌধুরী :-

১৯৯৮ সাল থেকে কানাডাতে অবস্থান করছে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি নূর চৌধুরী। ওই সময় থেকে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য অনেকবার আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয় কানাডা সরকার। নূর চৌধুরী এবং তার স্ত্রীর রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন খারিজ করে দেয় কানাডা সরকার এবং কোর্ট। তখন থেকেই নূর চৌধুরী কোনও স্ট্যাটাস ছাড়াই কানাডাতে অবস্থান করছে। পরবর্তীতে ২০০৪ ও ২০০৭ সালে নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য কানাডা ডিপোরটেশন আদেশ জারি করলেও তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনাগ্রহের কারণে ফেরত আনা হয়নি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে বিপদ আঁচ করতে পেরে নূর চৌধুরী প্রি-রিস্ক রিমোভাল অ্যাসেসমেন্ট আবেদন করে। এ ধরনের আবেদন সাধারণত এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে কিন্তু নূর চৌধুরীর ক্ষেত্রে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল ১০ বছরেও এটির নিষ্পত্তি করেনি।

নূর চৌধুরী

বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ এর জুলাই মাসে কানাডার ফেডারেল কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে যাতে করে কানাডার সরকার নূর চৌধুরীর স্ট্যাটাস আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। পরের বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কোর্ট বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। নূর চৌধুরীর স্ট্যাটাস বাংলাদেশকে জানানোর জন্য কানাডা সরকারকে নির্দেশ দেয়। একই দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য কানাডার সরকারের সহায়তা অনুরোধ করে একটি চিঠি দেন। তবে এ বিষয়ে কানাডার সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বা নূর চৌধুরীর স্ট্যাটাস জানায়নি।

খন্দকার আব্দুর রশিদ :-

বঙ্গবন্ধুর অন্যতম এই খুনি অন্য কোনও দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হয়। কারণ বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করলে রিনিউ করার জন্য তাকে আবেদন করতে হতো। ধারনা করা হয় রশিদ পাকিস্তান বা আফ্রিকার কোনও দেশে পালিয়ে আসে তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

                                   খন্দকার আব্দুর রশিদ

শরিফুল হক ডালিম :-

বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি ডালিমও ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৯৫ সালে কেনিয়াতে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন অবস্থায় অবসরে যায় ডালিম।

                                               শরিফুল হক ডালিম

বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয় সরকার। সে পাকিস্তান, লিবিয়া বা স্পেনে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হলেও এ বিষয়ে নিশ্চিত নয় সরকার।,